১১ নভেম্বর সংসদ নির্বাচন ঘিরে জোর প্রস্তুতি চলছে ইরাকে। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে দেশটি। ২০০৫ সালে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার হয় ইরাকিদের। তবে সাদ্দামের পতনে ভোট বয়কট করে সুন্নি সম্প্রদায়। মূলত এরপর থেকেই ইরাকের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় শিয়াদের।
তরুণ ইরাকিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন কমলেও, দেশটিতে এখনও বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতেই কুক্ষিগত আছে শাসন ব্যবস্থা। অলিখিত নিয়মে প্রধানমন্ত্রী শিয়া, সংসদের স্পিকার সুন্নি এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন কুর্দি সম্প্রদায় থেকে। এর ফলে বেড়েছে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির বিশাল তেল সম্পদ।
তবে এবারের নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক তরুণ প্রার্থীদের অংশগ্রহণ। ইরাকের নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, নিবন্ধিত প্রার্থীদের ৪০ শতাংশের বয়সই ৪০ বছরের নিচে। যেখানে প্রার্থীদের গড় বয়স প্রায় ৫৫ বছর। এবার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সংখ্যালঘু সুন্নি সদস্যরাও নির্বাচনে লড়ছেন।
আরও পড়ুন:
শিয়া প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-সুদানির এবং ক্ষমতাসীন দলগুলোকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে তরুণ নেতৃত্ব। ২০২২ সালে ক্ষমতা আসা আল-সুদানি দ্বিতীয় মেয়াদে শিয়া নেতৃত্বে দেশের ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। দুর্নীতি দূর করে সরকারি পরিষেবা উন্নত এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দিচ্ছে তার দল। সুদানির নেতৃত্বেই ইরাকের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। আল-সুদানির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের উত্থানে তার হাত ছিল।
সুন্নি সম্প্রদায়ের শক্তিশালী প্রার্থী সাবেক স্পিকার মোহাম্মদ আল-হালবুসি। ইরাকে সুন্নিদের শাসনক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি তার। ইরাকের কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি তেল সম্পদের আধিপত্য চায়। তাদের নেতা মাসুদ বারজানি। অন্যদিকে, প্রভাবশালী শিয়া ধর্মগুরু মোকতাদা আল-সদর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছেন। মার্কিন ও ইরানি প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। এতে অন্যদের পথ অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এদিকে, ইরান সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীর মিত্র হিসেবে পরিচিত মিলিশিয়া নেতা কাইস আল-খাজালি গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের চোখে তার দল এখনো সন্ত্রাসী সংগঠন।
তবে গেল ২০ বছরের গণতান্ত্রিক ধারায় হতাশ ইরাকের সাধারণ মানুষ। এবার তরুণ প্রার্থীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের আশ্বাস দিলেও ভোটারদের মন জয় করতে পারছে না। তরুণ ভোটারদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরাকের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে খুব একটা পরিবর্তন আনবে না এই নির্বাচন। কারণ ক্ষমতা এখনো অভিজাত শ্রেণি, প্রভাবশালী নেতা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গাজা যুদ্ধে ইরাক আঞ্চলিক অস্থিরতা এড়াতে পারলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা কমেনি। ইরাকের ক্ষমতায় যে দল আসবে তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
ভোটের কয়েক দিনের মধ্যেই প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হলেও, সরকার গঠনে সময় লাগবে কয়েক মাস। দেশটির নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টে ফলাফল অনুমোদিত হওয়ার পর, ৩২৯ সদস্য স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি বেছে নেবেন। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে মনোনীত প্রার্থীকে গঠন করতে হবে মন্ত্রীসভা।





