সহজেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে বন্ধু বলে সম্বোধন করেও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বশে আনতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যার কারণে মস্কোর অর্থনীতিতে আঘাত হানতে জ্বালানি তেল বাণিজ্যের লাগাম টানতে বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে ওয়াশিংটন। একই পথে হাঁটছে ইউরোপও। এসব কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না পুতিন। কূটনৈতিক গতি থমকে যাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে যুদ্ধ উত্তেজনার পারদ।
গত শনিবার ইউক্রেনে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশন এবং বহু আবাসিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ভয়াবহ রুশ হামলা তার বড় প্রমাণ। রাতভর ৪৫০টিরও বেশি ড্রোন ও ৪৫টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ সেনারা এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি কিয়েভের। এত প্রাণ গেছে ১০ জনের বেশি। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশটির কিছু অংশ অন্ধকারে ডুবে আছে। বেসামরিক ইউক্রেনীয়দের মাঝে বাড়ছে হতাশা।
ইউক্রেনের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমাদের ঘরবাড়ির কথা মনে হলে কষ্ট হয়। অনেকের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক মানুষ অনেক কষ্টে বসবাস করছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আমি হতাশ।’
এদিন কিয়েভসহ ২৫টি অঞ্চলকে লক্ষবস্তু করেছে রুশ বাহিনী। জায়গায় চালানো হয়েছে হামলা। নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৪০৬টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করছে ইউক্রেন। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধ তীব্র হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে মিত্রদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
আরও পড়ুন:
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর পর্যাপ্ত চাপ নেই। তাই পুতিন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে এবং আমাদের দেশ ও আমাদের জনগণের আরও ক্ষতি করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। অহংকারের প্রতি দুর্বলতা দেখানোয় রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাচ্ছে। তাই ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে রাশিয়ার ওপর অনেক বেশি চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে যুদ্ধ করার কারণে রাশিয়া নিজেই বেঁচে থাকার উপায় হারায়।’
এদিকে, ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। কেবল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা করার দাবি দেশটির। এর আগে শুক্রবার রাতে ইউক্রেনের ছোড়া ৭৯টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়কার যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৯ শতাংশের বেশি এলাকা বা প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করার দাবি রাশিয়ার। এরমধ্যে চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করেছে পুতিন বাহিনী।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। যুক্তরাষ্ট্র তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করবে; সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন হুমকির পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার।





