অতিরিক্ত ওজনে ভুগছে- এমন মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ ভারত। দেশটিতে টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় আট কোটি মানুষ।
ভারতে ওজন কমাতে সহায়ক ওষুধের ক্রমবর্ধমান বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে নতুন দু’টি ওষুধের। একটি ড্যানিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট নোভো নরডিস্কের সেমাগ্লুটাইড, যেটি মুখে খাওয়া অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেবনযোগ্য। অন্যটি-মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলি লিলির মৌনজারো।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এসব ওষুধ আবিষ্কৃত হলেও ভারতে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে ওজন কমাতে। সপ্তাহে একবার সেবনযোগ্য এসব ওষুধের পেছনে মাসের খরচ, ১৪ হাজার থেকে ২৭ হাজার রুপি, যা বেশিরভাগ ভারতীয়র জন্য কষ্টসাধ্য হলেও ওষুধ বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী।
বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দু’টি ওষুধই ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক হরমোনের কাজ করে। হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং মস্তিষ্কের ক্ষুধা অনুভবের কেন্দ্রগুলোতে কাজ করে, এসব ওষুধ মানুষকে দ্রুত ক্ষুধা মুক্তির অনুভূতি দেয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা মনে করায়।
এসব ওষুধের বেশিরভাগই বাহু, উরু বা পেটে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া যায় নিজে নিজেই। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ এবং বিপাক ও শক্তির ভারসাম্য বাড়ে এসব ওষুধে।
আরও পড়ুন:
এক সপ্তাহের মধ্যে ওজন কমতে শুরু করলেও চিকিৎসকদের সতর্কতা, বেশিরভাগ সেবনকারী ওষুধ বন্ধের এক বছরের মধ্যে পুরোনো ওজনে ফিরে যেতে পারে। শরীরচর্চা বা শক্তির প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে দীর্ঘদিন এসব ওষুধ সেবনে চর্বির সাথে ক্ষয় হতে পারে দরকারি মাংসপেশীও।
এছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমিভাব, ডায়রিয়া, এমনকি পিত্তথলিতে পাথর ও অগ্ন্যাশয় ফুলে যাওয়ার মতো ঝুঁকি তো আছেই।
উচ্চ-শর্করা আর অপ্রতুল আমিষের খাদ্যাভ্যাসের ফলে, চর্বি বেড়ে ও পেশী কমে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা ভারতীয় উপমহাদেশে আগে থেকেই বেশি। পর্যাপ্ত আমিষ ও শরীরচর্চা ছাড়া ওজন কমানোর প্রবণতায় পরিস্থিতি যাচ্ছে আরও খারাপের দিকে।
বলা হচ্ছে, ভারতের এ সংকট বিশাল হিমশৈলের দৃশ্যমান চূড়া মাত্র। হিতে বিপরীত হলেও কষ্ট ছাড়া দ্রুত ওজন কমাতে জীবনযাত্রার ধরন না বদলে ওষুধ খেয়ে স্বাস্থ্যগঠনে ঝুঁকছে সাধারণ মানুষ।
২০২১ সালে ভারতে ওজন কমানোর ওষুধের বাজার ছিল এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের, যা পাঁচ বছরে ছয় গুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ডলারে। স্থূলতা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়ছে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি নামের ওজন কমানোর অস্ত্রোপচারও। ২০০৪ সালে যেখানে এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ২০০ জন, ২০২২ সালে ২০০ গুণ বেড়ে এ সংখ্যা পৌঁছে ৪০ হাজারে।





