নাইজেরিয়ায় হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমোদন নিতে হবে: জাতিসংঘ

নাইজেরিয়ায় সামরিক বাহিনীর টহল
নাইজেরিয়ায় সামরিক বাহিনীর টহল | ছবি: এখন টিভি
0

চাইলেই নাইজেরিয়ায় হামলা চালাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। হামলার আগে ওয়াশিংটনকে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে। এদিকে, নাইজেরিয়ায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সন্ত্রাসী হামলাকে ধর্মের মাপকাঠিতে না ফেলানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি নাইজেরিয়ার সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রত্যাশা করেন তারা।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের হামলার হুমকি বেশ কয়েকদিন ধরেই বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। স্থল কিংবা আকাশপথে দেশটিতে হামলার হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। অভিযোগ, নাইজেরিয়া সরকার দেশটিতে সংঘটিত খ্রিস্টান হত্যার যথাযথ বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হচ্ছে। দ্রুত এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নাইজেরিয়াকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানান ট্রাম্প।

তবে ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন হামলাকে স্বাগত জানানো হবে বলে এরইমধ্যে বার্তা দিয়েছে নাইজেরিয়ার সরকার। একই অভিমত বিশেষজ্ঞদেরও।

গুড গভর্নেন্স আফ্রিকা জ্যেষ্ঠ গবেষক মালিক স্যামুয়েল বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূলে ও তাদের ফান্ডিংয়ের উৎস জানতে গোয়েন্দা তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ ক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।’

কিন্তু ট্রাম্প ঢালাওভাবে শুধু খ্রিস্টানদের ওপর হওয়া নিপীড়নের বিচার চাইলেও, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এনজিও প্রতিষ্ঠান গুড গভর্নেন্স আফ্রিকার সিনিয়র গবেষক মালিক স্যামুয়েল জানান, দেশটির অভ্যন্তরে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বোকো হারামসহ অন্যান্য ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চালানো হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়। আর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাগুলো সবচেয়ে বেশি সংঘটিত হয়েছে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে। তবে স্যামুয়েল দেশটিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী আক্রমণগুলোকে ধর্মের মাপকাঠিতে বিবেচনা না করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

গুড গভর্নেন্স আফ্রিকা জ্যেষ্ঠ গবেষক মালিক স্যামুয়েল আরও বলেন, ‘সংঘাতকে ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। নাইজেরিয়ান সরকার বিদ্রোহীদের যেকোনো হুমকিকে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের হুমকি হিসেবে মূল্যায়ন করে। আমি যতদূর জানি প্রতিটি নাইজেরিয়ান চায়, শান্তিতে ঘুমাতে। তাই বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে, নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক সিনিয়র প্রসিকিউটর ।

জাতিসংঘের সিনিয়র প্রসিকিউটর চার্লস অ্যডিওগুণ ফিলিপস বলেন, ‘এ ধরনের প্রস্তাবনা তখনই নিরাপত্তা পরিষদে গ্রহণ করা হয় যখন মনে করা হয় চলমান পরিস্থিতি বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি ফেলতে পারে। তবে কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত আসে আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে।’

শুধু বোকো হারাম বা অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীই নয়, মধ্য নাইজেরিয়ায় জল ও চারণভূমির অধিকার নিয়ে বেশিরভাগ মুসলিম পশুপালক ও খ্রিস্টান কৃষকদের মধ্যে মাঝে মাঝেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আড়াইশোর বেশি নৃগোষ্ঠীর বাস হলেও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার প্রায় অর্ধেক জনগণ মুসলমান। যাদের বসবাস দেশের উত্তরে। বিপরীতে বিশ্বের ৭ম সর্বোচ্চ জনবহুল এ রাষ্ট্রটির ৪০ শতাংশ খ্রিস্টান, যাদের বসতি দক্ষিণ প্রান্তে।

এছাড়া, বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের একটি বড় অংশের যোগান দেয় নাইজেরিয়া, যা দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। দেশটির দক্ষিণ অংশে, বিশেষত নাইজার নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত রয়েছে, যা আগামী বহু দশক ধরে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট।

এফএস