ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার গতিতে হারিকেন মেলিসা আঘাত হানার পর জ্যামাইকায় এখন দৃশ্যমান ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে জীবন-জীবিকার এমন কোনো উৎস নেই যেখানে বিধ্বংসী থাবা বসায়নি হারিকেন মেলিসা। দুমড়ে মুচড়ে গেছে মন্টেগো বিমানবন্দরের একটি অংশ। ৬দিন পর এখনও স্বাভাবিক হয়নি ফ্লাইট চলাচল। ভোগান্তিতে যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে আমাদের ২৭ তারিখে চলে যাওয়া উচিত ছিল। অনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পড়ে গেছি। কখন ফিরতে পারবো তা জানা যাচ্ছে না। আমরা পেরুর বাসিন্দা। আমরা ১৪ জন ফিরতে পারছি না। অবশেষে আমাদের নিতে আজ পেরু সরকার বিমান বাহিনীর একটি বিমানের পাঠাচ্ছে।’
৬৯ বছর বয়সী জ্যামাইকান নাগরিকের মতো কতো-শত মানুষের তিল তিল করে গড়ে তোলা গবাদি-পশু-পাখির খামার, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে তছনছ হয়েছে তার সঠিক হিসেব অজানা। তবে তাদের ক্ষয়ক্ষতিতে খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
জ্যামাইকান ডিম সরবরাহকারী বলেন, ‘অনেক বড় প্রভাব পড়বে। কারণ আমরা জ্যামাইকার ২০০ টিরও বেশি সুপারমার্কেট এবং প্রায় ১৪টিরও বেশি হোটেলে ডিম সরবরাহ করতাম। দুর্ভিক্ষ শুরু হতে চলেছে, মারাত্মক দুর্ভিক্ষ। মানুষ খাওয়ার জন্য কিছু পাবে না, কারণ শাকসবজি থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্য সবকিছুই বাতাসে অদৃশ্য হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন:
এখনও বিদ্যুৎ-বিহীন জ্যামাইকার সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ। বিভিন্ন দেশ থেকে পৌঁছাতে শুরু করছে জরুরি মানবিক সহায়তা সামগ্রী। চলছে উদ্ধার তৎপরতাও। উদ্ধার করা হয়েছে ১৯ মরদেহ।
শুধু জ্যামাইকা নয়, ক্যারিবীয় অঞ্চলের হাইতি, কিউবা ও বাহামায়ও ধ্বংসের ছাপ রেখে গেছে মেলিসা। এরমধ্যে বন্যার পানিতে উদ্ধার তৎপরতার এই দৃশটি কিউবার। আর কাদামাটি ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রাণের সন্ধান চালাচ্ছে হাইতির স্বেচ্ছাসেবকরা। হাইতিতে ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে ৩০টির বেশি মরদেহ। এখনও নিখোঁজ ২০ জন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার স্ত্রী এবং তিন সন্তান ছিল। দুটি সন্তানকে হারিয়েছি। বাকি এক সন্তানও গুরুতর আহত। যখন পানি ঢুকে পড়ে, তখন আমাদের পালানোর সময় ছিল না। মৃতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে নিখোঁজদের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
হারিকেন মেলিসার ভয়াবহ তাণ্ডবে জ্যামাইকাসহ পুরো পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলে ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি ও লোকসান হতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন পূর্বাভাস সংস্থা অ্যাকুওয়েদার। আর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে সমুদ্রের পানি উষ্ণ হওয়ার ফলে ঘূর্ণিঝড় দ্রুত এবং বৃহত্তর ফ্রিকোয়েন্সিতে দিনদিন তীব্র হয়ে উঠছে।





