প্রকৃতির অপরূপ লীলায় সাজানো ফিলিপিন্সের আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে ছোট প্রদেশ বাটানেস। দ্বীপ-বেষ্টিত অঞ্চলটির মানুষ শান্তিতে দিন কাটালেও, জটিল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তারা পড়েছেন বিশ্বের দুই পরাশক্তি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার লড়াইয়ের মধ্যভাগে ।
সম্প্রতি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো এবং চীন- তাইওয়ান উত্তেজনায় বেইজিংকে কোণঠাসা রাখতে ফিলিপিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে বাশি চ্যানেলে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানের মধ্যে প্রধান নৌ-যান চলাচলকারী পথ। এছাড়া, রুটটি দক্ষিণ চীন সাগরকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
রয়টার্স জানায়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী অন্তত দুবার সাগরে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। মূলত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আধিপত্য ঠেকাতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালায় পেন্টাগন। এছাড়া, ভবিষ্যতে চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে, তাদের নৌ-বহরকে রুখতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এসব জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
আগস্টে হাওয়াইতে মার্কিন-ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের কমান্ড প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফিলিপিন্সের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান। যেখানে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশি যৌথ মহড়া পরিচালনায় সম্মত হয় ওয়াশিংটন ও ম্যানিলা।
আরও পড়ুন:
এছাড়া, জুনে কংগ্রসে দেয়া এক বক্তব্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জানান, ফার্স্ট আইল্যান্ডে চীনা আগ্রাসন রুখতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা আধুনিকীকরণে কাজ করছে পেন্টাগন। এ লক্ষ্যে ফিলিপিন্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সমর্থন প্রয়োজন মার্কিন সামরিক বিভাগের। ইতোমধ্যে ম্যানিলা ওয়াশিংটনকে তাদের চারটি সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
ফিলিপিন্সের উত্তর লুজনের সাবেক নৌ-কমান্ডার এডওয়ার্ড ইকে ডি স্যাগন বলেন, ফিলিপিন্সের নৌ-বাহিনীর জন্য বাটানেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপটি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কাছেই আগ্রহের কেন্দ্রস্থল। কেননা এটি চীন ও ফিলিপিন্সকে পৃথক করেছে। কিছু দেশ সামরিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বাটানেসের নিয়ন্ত্রণ চাইবে।
তবে ফিলিপিন্সের অভিযোগ, উত্তেজনাকে উস্কে দিতে প্রায়ই তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে চলাচলকারী সামরিক ও বেসামরিক নৌযানে হয়রানি চলাচ্ছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে গেল বছর এপ্রিলে ভারত থেকে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের অর্ডারের অংশ হিসাবে ব্রহ্মোস সুপারসনিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাটারির ডেলিভারি পেয়েছিল তারা । সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অনুসারে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লায় আঘাত হানতে সক্ষম।
রয়টার্স জানায়, বাশি চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্র- ফিলিপিন্স যৌথ সামরিক মহড়া ভালোভাবে নিচ্ছে না বেইজিং। জাপানি সামরিক ট্রাকিংয়ের বরাতে রয়টার্স জানায়, মে মাসে সাগরে মার্কিন মেরিন এনএমইসিস মোতায়েনের মাত্র একদিন পরই চীনা নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ শানডং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য বাশি চ্যানেলে যাত্রা করে। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও বাটানেসের গভর্নর আগুতোর বিশ্বাস, ফিলিপিন্সের দ্বীপপুঞ্জে হামলা চালাবে না চীন।





