যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর কমলার সমারোহ। মনে হবে কোনো শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে আকা এক দারুণ শিল্পকর্ম। কিন্তু বাস্তবে এগুলো ফসলি জমি। যেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে মেক্সিকোর স্থানীয় ফুল সেম্পাসুচিল। যেটিকে আমরা চিনি গাঁদা ফুল নামে।
মধ্য মেক্সিকোর হিডালগো রাজ্যের একটি ছোট শহর ডোক্সি। সেম্পাসুচিল ফুল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন জেনোভিভা পেরেজ ফ্যালকন নামে এক উদ্যমী নারী। তিনি ও তার দুই মেয়ে ভারত বা চীন থেকে ফুলের বীজ সংগ্রহ না করে, স্থানীয় পদ্ধতিতে বীজ রোপণ করেন। যার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে স্থানীয় বাজারে।
বাণিজ্যিক উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেছে এই কৃষক পরিবার। প্রথাগত পদ্ধতির মাধ্যমে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন তারা।
কৃষক পরিবারের একজন সদস্য বলেন, ‘কীটনাশক শুধু মাটিরই ক্ষতি করে না, গাছপালা ও কীটপতঙ্গরেও ক্ষতি করে। তাই আমরা কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করি না। আমরা মাটির যত্ন নেই, ফুলের যত্ন নেই। পরিবেশের ভালো চাই।’
আরও পড়ুন:
এই ফুল চাষের মধ্য দিয়েই সংসার চলে পরিবারটির। ফুল সংগ্রহের এই সময়ে ব্যস্ততা বাড়ে শ্রমিক সংগ্রহের।
কৃষক পরিবারের আরেক সদস্য বলেন, ‘ফুল সংগ্রহের জন্য লোক খুঁজছি। এটি শুধু আমার পরিবার নয়, অন্যদের জন্য আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আমি গর্বিত।’
মেক্সিকোর অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেম্পাসুচিল ফুল চাষ। সংবাদমাধ্যম এপি জানায়, ২০২৫ সালে এ ফুল চাষ করে প্রায় তিন মিলিয়ন ডলার আয় করবেন কৃষকেরা।
আরেকটি বিশেষত্ব রয়েছে ফুলটির। প্রতিবছর মেক্সিকোতে নভেম্বরের প্রথম দুইদিন একটি উৎসব হয়। তখন ঘরে ঘরে সেম্পাসুচল ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
রীতি অনুযায়ী, পরিবারগুলো তাদের মারা যাওয়া সদস্যদের বেদি সাজায় সেম্পাসুচিল ফুলের পাপড়িতে। তাদের বিশ্বাস, ফুলের সুবাস ও রং মৃতদের আত্নাদের ফিরিয়ে আনে পরিবারের কাছে। এ কারণে এটিকে মৃতদের ফুলও বলা হয়।
এর রং, গন্ধ সবকিছু দিয়ে বেদিগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যাতে প্রতীকীভাবে মৃতদের আত্না ফিরে আসতে পারে এবং মনে করতে পারে সবকিছু তাদের জন্যই করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেক্সিকোতে উদযাপিত হবে মৃতদের স্মরণে এ প্রতীকী উৎসব।




