রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ায় গেছে ৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মী, দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ

রাশিয়ায় কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্মী সংকট তৈরি হয়েছে, সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের | ছবি: সংগৃহীত
1

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও গত এক বছরে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী গেছেন রাশিয়ায়, যা বিগত বিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়ালেও দেশটির বেশকিছু খাতে নতুন কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। নির্মাণ, কৃষি ও জাহাজশিল্পসহ কয়েকটি খাতে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের এ সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ।

বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়ায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ কর্মী মিলে প্রায় ৫০ হাজারের মতো বাংলাদেশি বসবাস করছেন। শিক্ষার্থী ও পারিবারিক ভিসা নিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা সেখানে অপেক্ষাকৃত সহজ ও মানসম্মত জীবনযাপন করছেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, কেবল এক বছরেই দেশটিতে গেছেন ৩ হাজার ৭১০ বাংলাদেশি, যা বিগত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছরে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত রাশিয়ায় গেছেন ৪ হাজার ৭৮৩ জন। একই সময়ে ইউক্রেন গেছেন মাত্র ৮৩ জন।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করলে বড় সংঘাত তৈরি হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে প্রকট হতে থাকে শ্রমিক সংকট।

এই সংকট কাটাতে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়ালেও যুদ্ধ পরবর্তী রাশিয়ায় বিপুল সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন পড়বে। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, প্রযুক্তি, জাহাজ শিল্প, সার্ভিস সেক্টর, ওয়েল্ডিং, ভারী শিল্পসহ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হবে। যা বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।

বর্তমানে শিক্ষার্থী ভিসা ছাড়াও কারখানা ও ভারী শিল্পে কাজ করতে প্রতি মাসেই বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক যাচ্ছেন রাশিয়ায়। কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানেই কাজ করতে হয় তাদের। কাজের মান ও চুক্তির ধরণ অনুযায়ী পান বেতন।

আরও পড়ুন:

আবার দেশটির নাগরিকত্ব ও এককালীন ভালো অর্থ পাবার লোভে যুদ্ধেও যাচ্ছেন কেউ কেউ। রাশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা জানান, পুরো প্রক্রিয়াটি বেসরকারি পর্যায় থেকে হওয়ায় জবাবদিহিতা বা সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে না।

তবে রাশিয়া তাদের শ্রমিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত থেকে ৩১ লাখ দক্ষ কর্মী নেয়ার কথা রয়েছে তাদের। সেই চুক্তির আওতায় নির্মাণ ও বস্ত্রশিল্প খাতে চলতি বছরই ভারত থেকে প্রায় ১০ লাখ কর্মী নেবে দেশটি। এছাড়া কর্মীদের মধ্যে যারা উচ্চশিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত তাদের সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদেও নিয়োগ দেয়া হবে।

প্রবাসীরা জানান, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় রাশিয়া।

অন্যদিকে, মধ্য এশিয়া ও ল্যাটিনদের জন্য বড় কর্মক্ষেত্র রাশিয়া। চীন ও উত্তর কোরিয়ার লাখো কর্মী কাজ করেন সেখানে। ভারতীয়রাও ধীরে ধীরে নিজেদের সুযোগ তৈরি করে নিচ্ছে দেশটিতে। এই অবস্থায় সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষতার প্রশ্নে কিছুটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। তাই নতুন শ্রমিকের জন্য কাজের সুযোগও সীমিত।

তবুও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট দেশটির শ্রমিক সংকটের এই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ- সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এসএইচ