জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল: ইরান-পশ্চিমাদের উত্তেজনা চরমে

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে আবারও উত্তপ্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে আবারও উত্তপ্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির দেয়া চিঠির পর নেতানিয়াহুর দেয়া আল্টিমেটামের দিনেই ইরানের ওপর সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলো জাতিসংঘ। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ইরানের সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে প্রকট হচ্ছে তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনা বাড়ার শঙ্কা। এ অবস্থায় যে কোনো পরিণতির দায় পশ্চিমাদেরই নিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে তেহরান।

ইরান পূর্বেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেনি, ভবিষ্যতেও উৎপাদনের ইচ্ছা নেই। জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে জোর দিয়ে এমনই দাবিই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।

পেজেশকিয়ান ইরান কখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পেছনে ছুটেনি। আমরা কখনও গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির পেছনে হাটতেও চাই না।

এরপরও পশ্চিমাদের মনে বিশ্বাস জাগাতে পারেনি তেহরান। পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যু টেনে ইরানকে নিশানা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররা। এই সুযোগে নিজেদের পক্ষে মিত্রদের সমর্থনের পাল্লা ভারি করতে শুক্রবার জাতিসংঘের ভাষণে ইরানকে সবার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নানাভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেন নেতানিয়াহু। এমনকি ইরানের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আল্টিমেটামও দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী।

নেতানিয়াহু ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামগুলো অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। এর জন্য আগামীকাল ইরানের উপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল জরুরি।

নেতানিয়াহুর দেয়া আল্টিমেটামের দিনেই ইরানের ওপর সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলো জাতিসংঘ। এরআগে অবশ্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গত মাসে চিঠি দিয়েছিলো যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি। যা ৬ মাস পেছানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি ইরানের মিত্র রাশিয়া ও চীন। এতে করে তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উদ্বিগ্ন ইরানের সাধারণ মানুষ।

ইরানের বাসিন্দারা বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞায় আমাদের ওপর অনেক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

অন্য একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমি কেবল নিরাপদভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। পরিবার নিয়ে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারাটাই বড় চাওয়া। নিশ্চয় সরকার দেশের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে।’

নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কারণে যেকোনো পরিণতির দায় পশ্চিমাদের নিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে তেহরান। কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আর ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এর কবর রচনা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের কারণে যে কোনো পরিণতির জন্য ই-থ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ দায়ী। তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ইরানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। কূটনীতিতে বাধা দিয়ে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করেছে।’

জাতিসংঘের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে ইরান প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবেশী ও ইউরেশিয়ার দেশগুলো ছাড়াও ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা'র সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে। আমরা দেশের জনগণ এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি যত্নশীল। যদি আমরা শক্তি অর্জন করতে পারি এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে পারি তাহলে এ নিষেধাজ্ঞায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

পারমাণবিক অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে ২০১৫ সালে হওয়া চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে ইরান; তিন ইউরোপীয় দেশের এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলো জাতিসংঘ। এ আওতায় রয়েছে অস্ত্র কেনাবেচা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যক্রম। এছাড়া বিশ্বব্যাপী থাকা দেশটির সম্পদ জব্দ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিসহ জ্বালানি খাতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

ইএ