বিক্ষোভ-সহিংসতা পেরিয়ে গতি ফিরেছে নেপালের জনজীবনে, স্বস্তি ব্যবসায়ীদের

নেপালের বর্তমান জনজীবনের চিত্র | ছবি: সংগৃহীত
0

দু’দিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় নেপালের পর্যটনখাতে ক্ষতি দুই হাজার ৫০০ কোটি রুপির। পর্যটন মৌসুমেও বাতিল হয়েছে বহু হোটেল বুকিং। এদিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অনেকটা স্বস্তিতে নেপালবাসী। রাজধানীতে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভারত-নেপাল সীমান্তে বাণিজ্য ফিরেছে নিজস্ব ছন্দে, ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। জেন-জিদের মতে, সরকারের দুর্নীতি তাদের আন্দোলনে গতি এনেছে।

নেপালের জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অবদান ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর দেশটিতে ভ্রমণের জন্য আসেন ১০ লাখের বেশি পর্যটক। নেপালের ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্যমতে, গেলো বছর কেবল আগস্টেই হিমালয় কণ্যাখ্যাত নেপালে ভ্রমণ করেছেন প্রায় ৯০ হাজার পর্যটক। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে ভারত থেকে।

২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ভারত থেকে ৩৫ হাজার ৫০৫, চীন থেকে ৭ হাজার ৫৩৩, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬ হাজার ৬৮, শ্রীলঙ্কা থেকে ৫ হাজার ৯৫৬ এবং বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ২৬২ জন পর্যটক নেপালে যান।

গেলো ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভে নেপালের পর্যটন খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি রুপি। সহিংস এ আন্দোলনে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় ২০টিরও বেশি হোটেলে। 

এর মধ্যে কাঠমান্ডুর পাঁচ তারকা হোটেল হিলটনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি রুপি। এছাড়া পোখারা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর, ধনগাড়িসহ জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই ব্যাপকহারে বাতিল হয়েছে হোটেলগুলোর বুকিং।

এদিকে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি।

সুশীলা কার্কি বলেন, ‘নেপালের ইতিহাসে সহিংসতায় এই প্রথম এতো ব্যাপক আকারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার এমন অবস্থা হয়েছে, যেগুলো আসলেই দুঃখজনক। এসব কর্মকাণ্ড অনেকটা পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে। তদন্তে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারী কেউ রেহাই পাবে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকটাই স্বাভাবিক এখন নেপালের জনজীবন, ফিরেছে স্বস্তি। রাজধানীতে বেড়েছে ব্যস্ততা, সড়কে চলছে গণপরিবহন। ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে বাজার ও দোকানপাট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের জেরে মূলত আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে নেপালের তরুণ সমাজের মধ্যে। পরে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। 

জেন-জিদের দাবি, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও বৈষম্য তাদের এ আন্দোলনে গতি এনেছে। এবার তাদের স্বপ্ন দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ গড়া।

বিক্ষোভের জেরে এক সপ্তাহ পর ভারত-নেপাল সীমান্তে ফের চালু হয়েছে বাণিজ্য। সীমান্তে আটকে পড়া শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক প্রবেশ করছে নেপালে। জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাম্প স্টেশনগুলোও খুলতে শুরু করেছে।

২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর থেকেই নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নেপাল। ২০১৫ সালের ভূমিকম্প এবং করোনা মহামারির পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল নেপালের পর্যটনখাত। এবারও দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হবে এই খাত— এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

এসএইচ