প্রতিনিধি পর্যায়ে শান্তি আলোচনার পরও আক্রমণ অব্যাহত রাশিয়ার

ইউক্রেনের একটি অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনী
ইউক্রেনের একটি অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনী | ছবি: সংগৃহীত
0

তুরস্কে পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর প্রতিনিধি পর্যায়ে শান্তি আলোচনার পরও ইউক্রেনে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। সুমি, খারকিভ, দোনেৎস্ক এবং অন্যান্য স্থানে চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের লড়াই। শনিবার (১৭ মে) দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বসতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি রুশ সেনাবাহিনীর।

এ অবস্থায় রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টায় সোমবার পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনে শান্তির জন্য রাশিয়ার উপর চাপ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যে প্রথমবারের মতো আলোচনার আহ্বান জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে তুরস্কে আসেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। পরে শুক্রবার বৈঠক গড়ায় দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ে। শুধু দুই পক্ষের ১হাজার বন্দিবিনিময়ে শেষ হয় আলোচনা। শান্তি আলোচনা থেকে শান্তি ফেরায় এখনও চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

সুমি, খারকিভ, দোনেৎস্ক এবং অন্যান্য স্থানে চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের লড়াই। একদিনে ইউক্রেনের ১৪৩টি লক্ষ্যবস্তুর গোলাবারুদ ও জ্বালানি ডিপো, ড্রোন স্টোরেজ পয়েন্ট, সামরিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার দাবি রুশ সেনাদের। ক্রিমিয়ার একটি গোলাবারুদ ডিপোতে ড্রোন হামলার দাবি ইউক্রেনের।

শনিবার দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বসতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় শান্তি আলোচনায় রাশিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। যার আকাঙ্ক্ষা শান্তি দেখা। কিন্তু আমাদের বলতে হবে যে আবারও, রাশিয়া অস্পষ্টতা প্রকাশ করছে। রাশিয়া গুরুত্ব দেখাচ্ছে না। আমরা পুতিনকে বলব, যথেষ্ট হয়েছে। এবার আসুন আমরা শান্তির জন্য গুরুত্ব সহকারে বসি।’

পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কথা বলতে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে তিনি জানান, রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা নিয়ে হবে কথোপকথন। কারণ প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজারের বেশি রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হচ্ছেন। পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের দিনটি ফলপ্রসূ হবে বলেও প্রত্যাশা ট্রাম্পের।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ (রোববার, ১৮ মে) পোপ লিও চতুর্দশের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভ্যাটিকানে অবস্থান করছেন বিশ্ব নেতা ও সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তারা। সেখানেও প্রাধান্য পাচ্ছে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি ইস্যু। ইউক্রেন সংকট মোকাবেলায় ভ্যাটিকান সিটির অব্যাহত ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানালেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

পোপ লিও চতুর্দশের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে ইতালির রোমে অবস্থিত কানাডিয়ান দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে দেখা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এসময় শান্তি আলোচনার জন্য জেলেনস্কির তুরস্ক সফরের প্রশংসা করা ছাড়াও ইউক্রেনকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিন মার্ক কার্নি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ‘শান্তির প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করি, যেমনটি আপনি এই সপ্তাহে আবারও দেখিয়েছেন। আমরা জোর দিয়েছি যে ইউক্রেনের পূর্ণ সমর্থন এবং অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও শান্তি থাকতে পারে না এবং আপনার প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পুতিনের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা সত্যিই অপেক্ষা করেছিলাম, পুতিন আসেননি। আমরা মনে করি তিনি সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু যাই হোক, আমি মনে করি বন্দি, যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের এই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১হাজার জন অনেক সংখ্যা। আমি আশা করি ফলাফল পাব। দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই, পুতিনের উপর চাপ বাড়াতে হবে।’

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন থেকে ইউরোপ অনেক দূরে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জার্মানি এবং ইতালি। রাশিয়াকে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি রাজি করানেই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছে ইউরোপ।

সেজু