২০২২ সালের পর এই প্রথম রাশিয়া ও ইউক্রেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে সরাসরি বৈঠকে বসলো। দু'দেশের প্রতিনিধিরা ছাড়াও মধ্যস্থতায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কোন পক্ষই। মেলেনি কোন রূপরেখাও। এমনটা দাবি ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের। অবশ্য বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অংশ না নেয়ায় আগে থেকেই এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে দু'পক্ষই সম্মত হয়েছে ১ হাজার সেনা বিনিময়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথম এতো বিপুল সংখ্যক সৈন্য বিনিময় হবে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে।
২ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয় তাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠক। বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল প্রত্যাশা জানান, আগামী বৈঠকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি অংশগ্রহণের।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম ওমেরভ বলেন, ‘আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি। প্রত্যেক দেশ ১ হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে দুই দেশের নেতা সরাসরি বসবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
ইউক্রেনের প্রতিনিধির এ বৈঠককে ব্যর্থ বললেও একে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
পুতিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদেনস্কি বলেন, ‘১ হাজার সেনা বিনিময়ে রাজি হয়েছি দু' পক্ষই। দ্বিতীয়ত ইউক্রেনীয় পক্ষ থেকে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়েছি। উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদী।’
রাশিয়া-ইউক্রেন বৈঠকের পর আলবেনিয়ায় বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে কথা বলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেন বৈঠক ব্যর্থতার কারণ। সেসময় জেলেনস্কির পাশে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।
রাশিয়া আসলে ইউক্রেন ভূ-খণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চায় যা পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এছাড়া পুতিনের যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে কোন আগ্রহ নেই বলেও অভিযোগ তাদের।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারর্মার বলেন, ‘রাশিয়ার দাবি পুরোপুরি অযৌক্তিক যা কোন দিনও মেনে নেয়া যায় না। অবশ্য এর আগেও রাশিয়া একই দাবি করে আসছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে হবে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাশিয়া যে দাবি করে আসছে তা অগ্রহণযোগ্য। ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিই ইউক্রেনের প্রথম চাওয়া। তাই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিভিন্ন দিক দিয়ে চাপ দেয়ার আহ্বান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির।
প্রেসিডেন্ট, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ এ শর্তহীন যুদ্ধবিরতি চাই। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে। ইউক্রেনে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে রাশিয়াকে।’
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে যত দ্রুত সম্ভব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।