শ্রীলঙ্কায় কৃষি জমিতে বন্যপ্রাণীর দাপট, সমাধানে প্রাণিশুমারি

বিদেশে এখন
0

চাষের জমিতে হামলে পড়ে বানর, ময়ূর আর কাঠবিড়ালি। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কৃষি কাজই ছাড়তে বসেছেন কৃষকরা। প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে প্রাণিহত্যা মহাপাপ। তাই বন্যপ্রাণী নিধনের বিকল্প খুঁজতে প্রাণিশুমারি শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা, যাতে সাহায্য করছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

হাতে নোটবুক নিয়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছের নিচে ঘুরে ঘুরে বানর গুণছেন গেরুয়া পোশাকের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

দক্ষিণ এশিয়ায় বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশ শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে প্রাণিহত্যা মহাপাপ। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বন্যপ্রাণী বাড়তে বাড়তে কৃষিখাত হুমকির মুখে পড়লে প্রাণিহত্যার উপায় নেই। পশুপাখির হাত থেকে চাষের জমি, ফলের বাগান রক্ষায় তাই এয়ারগান নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাহারা দেন কৃষকরা।

কৃষকদের একজন বলেন, ‘১০ বছর আগে হাতেগোণা কয়েকটা বানর ছিল। বন্য শূকররাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেতো না। এখন ময়ূরের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতি শুধু খারাপই হয়েছে। এখন এমন অবস্থা যে শস্যের বীজ রোপণের কোনো মানেই হয় না।’

আরেকজন বলেন, ‘নারকেল, আম, কলা সব খেয়ে ফেলে বানরের দল। ময়ূর গিলে ফেলে বরবটি জাতীয় আস্ত সব সবজি। এদের অত্যাচারে কৃষিকাজ থেকে হাতই উঠিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে প্রাণিহত্যা নিষিদ্ধ বলে নিরুপায় কৃষকদের বাঁচাতে প্রাণিশুমারি শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা।’

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আট শতাংশ অবদান কৃষিখাতের, যে খাতের সাথে জড়িত ৮১ লাখ মানুষের জীবিকা। নারকেল রপ্তানিতে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ দেশ। প্রতি বছর কাজুসহ ৩০০ কোটি ডলারের নানা জাতের বাদাম যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

ফল, সবজি, বাদাম মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ নয় হাজার টনের বেশি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বড় কাঠবিড়ালি, ময়ূর আর বানরের পেটে চলে যায় বলে নারকেলের পাশাপাশি ফল আর সবজি চাষও বাধার মুখে।

এ অবস্থায় বন্যপ্রাণী নিধনের বিকল্প খুঁজতে দেশে কী পরিমাণ বানর, ময়ূর আর বড় জাতের কাঠবিড়ালি আছে, সে তথ্য সংগ্রহের কাজে হাত দিয়েছে লঙ্কান প্রশাসন।

শ্রীলঙ্কার গবাদি পশু ও কৃষি প্রতিমন্ত্রী নামালো করুণারত্ম বলেন, ‘পশুপাখির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে। কৃষিজমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এতে কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রাণিশুমারির মাধ্যমে ধারণা মিলবে যে কী পরিমাণ প্রাণি আছে। সমস্যা সমাধানের জন্য সংখ্যাটা জানা দরকার।’

গেল ফেব্রুয়ারিতে এক বানরের বাঁদরামিতে সারা দেশ তিনদিনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরই মূলত বানরের উৎপাত নিয়ে টনক নড়ে লঙ্কান প্রশাসনের।

ইএ