আর মাত্র ১ দিন পরেই চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা দীর্ঘায়িত হওয়া ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সমঝোতায় রাজি হতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে জেলেনস্কি সরকারের ওপর। যদিও কিয়েভকে ছাড়াই আলোচনায় বসেছে মস্কো ও ওয়াশিংটন। রয়েছে মার্কিন সহায়তা বন্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকি। তবে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকুক বা সরে দাঁড়াক, লড়াই অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউক্রেনীয় সেনারা।
ইউক্রেনীয় সেনাদের একজন বলেন, ‘অন্যান্য নেতাদের মতো জেলেনস্কি পালিয়ে যাননি। তাই তিনি আমাদের নেতা। তার সিদ্ধান্তকে আমরা সর্বোচ্চ সম্মান জানাবো।’
আরেকজন বলেন, ‘কতদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে? উত্তর হলো শেষ সেনা জীবিত থাকা পর্যন্ত। কারণ এছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প পথ খোলা নেই।’
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ জয়ের কোনো সম্ভাবনা না থাকার পরেও লড়াই অব্যাহত রাখছেন জেলেনস্কি। এতে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ট্রাম্পের দাবি, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেও বিপরীতটা মিলেছে ইউক্রেনের কাছ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধটি রাশিয়া, ইউক্রেন এমনকি মানবিক দিক থেকেও খারাপ। পুতিনের সঙ্গে আমার খুবই ভালো কথোপকথন হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। তাদের হাতে কোনো কার্ড না থাকা সত্ত্বেও খেলা অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি এটি চলতে দিতে পারি না। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে যুদ্ধ শুরু হতো না।’
সংঘাত নিরসনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে দুর্লভ খনিজ সম্পদ চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ম্যাগাজিন ফরচুনের তথ্যমতে, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে টাইটেনিয়াম, লিথিয়াম ও ইউরেনিয়ামসহ ১০৯টি খনিজ সম্পদ রয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদানের বিনিময়ে এর ৫০ শতাংশ মালিকানা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কিকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। কারণ আমরা লাখো মানুষের প্রাণহানি বন্ধ করতে চাই। আমরা দুর্লভ খনিজ চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি। এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও বড় চুক্তি। ইউক্রেনও চাইছে চুক্তিটি সম্পাদিত হোক।’
এদিকে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, খনিজ সম্পদ চুক্তির খসড়া যৌথভাবে প্রস্তুত করছে কিয়েভ ও ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার খসড়া চুক্তি প্রস্তুতের কাজ করছে। এই চুক্তি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চুক্তিটি এমনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে যাতে বিষয়টি বাস্তবেও কার্যকর হয়। তাই ভালো ফলের আশা করছি।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, চুক্তিতে রাজি হতে জেলেনস্কি সরকারকে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা বন্ধের হুমকিও দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ কবলিত ইউক্রেন ও তার সামরিক বাহিনীর জন্য একমাত্র ইন্টারনেট সরবরাহ করছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি।