অনিশ্চয়তার মুখে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি

বিদেশে এখন
0

হামাস-ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি ধীরে ধীরে অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। গাজা দখল ও ইসরাইলকে সমর্থন দিতে ট্রাম্পের ঘোষণায় তা আরো হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই পক্ষই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে একে অপরের বিরুদ্ধে। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতি কতটুকু সফলতার মুখ দেখবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যত দিন যাচ্ছে ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণে সম্ভাবনা। চুক্তির প্রথম পর্যায় শেষ না হতেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও দুই পক্ষের মধ্যে ষষ্ঠ ধাপের বন্দিবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখল করে পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়ায় মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সব জিম্মিদের মুক্তি না দিলে হামাসের ব্যাপারে ইসরাইল যে পদক্ষেপ নেবে তাতে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার আশ্বাসও দেন ট্রাম্প। গাজার ভবিষ্যৎ অনেকটাই ইসরাইলিদের ওপর সঁপে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছিলাম তার যা ইচ্ছা করতে। কারণ হামাস সব জিম্মিকে ফেরত দেয়ার শর্ত দিলেও এখন তা মানা হচ্ছে না। তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। গাজা ইস্যুতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ভর করবে ইসরাইলের ওপর।’

ফিলিস্তিনিদের মিশর, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যে স্থানান্তরে ট্রাম্পের পরিকল্পনার ব্যাপক নিন্দা জানায় বিভিন্ন দেশ। অনেকে এটিকে ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল হিসেবেও বর্ণনা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজা অধিগ্রহণের পরিকল্পনাও বেআইনি।

ফিলিস্তিনি-মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামাস-ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছেন। দুই পক্ষের চুক্তি ভঙ্গের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারের হুমকিকে দায়ী করেছেন তিনি।

আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি বিভিন্ন কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অনুপ্রবেশ ও চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে হামাস। এছাড়া, মানবিক সহায়তার পর্যাপ্ত ট্রাকও প্রবেশ করছে না গাজায়। উল্টো হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মানছে না বলেও ইসরাইলের অভিযোগ। গাজার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মার্কিন বিবৃতি আরও সমালোচনা জন্ম দিয়েছে।’

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কড়া সমালোচনা করেছে অলাভজনক থিঙ্কট্যাঙ্ক আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসি। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে হামাস। এই মুহূর্তে উপত্যকাটি নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা পুরোটাই অবাস্তব। তিনি গাজার মালিকানা কার কাছ থেকে কিনবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যা যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে আরো অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে।

আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মার্কিন আইন সম্পর্কে ট্রাম্পের ধারণা যতটুকু সে মতেই তিনি গাজার ওপর প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র কেবল গাজা উপত্যকা দখল করতে চায়। ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনা সহজে বাস্তবায়ন সম্ভব না। কারণ গাজাবাসী উপত্যকাটির ভেতরেই বসবাস করছে। তারা অন্য কোনো দেশ বা অঞ্চল থেকে ফিরছে না। তারা নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে যাচ্ছে এবং কিন্তু উপত্যকার সীমান্তের ভেতরেই আছে।’

ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপে এরই মধ্যে গাজাবাসীর মনে সন্দেহ জেগেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের ভূমি ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি না বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি। এদিকে, ইসরাইলকে ২ হাজার পাউন্ড ওজনের বোমার একটি বড় চালান পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। যা বাইডেন প্রশাসন এতদিন আটকে রেখেছিল।

ইএ