গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা, আইসিসির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

বিদেশে এখন
0

গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোন প্রয়োজন নেই, যুদ্ধ শেষে ইসরাইলি উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যেই, ইসরাইলের সমর্থনে আরো এক নির্বাহী আদেশ জারি করে হইচই ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। এবার, যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোকে টার্গেট করার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইসিসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

তীব্র শীতের মধ্যে ঝড়ো বাতাস বইছে, সেইসঙ্গে বৃষ্টি। শীতকালীন ঝড়ে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের এখানে সেখানে টানানো তাবুগুলো। এরপরও মাটি আঁকড়ে ধরে গাজা উপত্যকায় পড়ে আছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। লক্ষ্য একটাই, যত কষ্টই হোক পুনর্গঠন করতে হবে গাজা, কোনোভাবেই ছাড়া যাবে না এই উপত্যকা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসও গাজার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুরো আরব বিশ্বকে এই বিষয়ে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘রাতে ঝড় হলো। ধ্বংসস্তূপের নিচে তাবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। বাচ্চারা শীতে মারা যাচ্ছে। ঘুমাতে পারিনি। বৃষ্টির পানি তাবুর ভেতরে আসছে।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা এই উপত্যকা পুনর্গঠন করবো। আমেরিকা আর ইহুদি কাউকে আমরা চাইনা। পৃথিবীর অন্য সবার মতো ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। আরব বিশ্ব নিশ্চুপ কেন?’

ফিলিস্তিনের অদম্য এই ইচ্ছাশক্তি যেন আরও প্রবল হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা ইস্যুতে একের পর এক বিস্ময়কর বক্তব্যের পর। গাজা যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে নেবে, এমন মন্তব্যে তীব্র হইচই ফেলে দেয়ার পর এবার তিনি বলেছেন, গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কিছু নেই, হামাসবিরোধী অভিযান শেষ হলে এই উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেবে ইসরাইল। ততোদিনে এই উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও নিরাপদে রাখা হবে। ট্রাম্প আরো বলেন, গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই। এই বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই উপত্যকা পুনর্গঠন পর্যন্ত বাসিন্দাদের অন্য কোথাও থাকতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘গাজা আর বসবাসের উপযোগী নেই। শুধু ধ্বংসস্তূপ না। হামাসের বিপজ্জনক সমরাস্ত্র উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সব পরিষ্কার করতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রস্তাবই দিয়েছেন। কিছু দেশ এগিয়ে আসলে এই কাজ সহজ হবে। হতাশার বিষয়, অনেক দেশ গাজা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কাজের সময় কেউ এগিয়ে আসে না।’

গাজা উপত্যকার ২১ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য অন্য কোথাও বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা আর গাজাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরাইল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে উপত্যকা ছেড়ে যেতে সহযোগিতা করতে। এক্ষেত্রে তারা স্থল সীমান্ত ব্যবহার করতে পারে, সমুদ্র আর আকাশপথেও তাদের নিরাপদে প্রস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, গাজা পুনর্গঠনের স্বার্থে স্বেচ্ছায় এই উপত্যকা ছাড়তে পারবেন বাসিন্দারা।

যদিও গাজা উপত্যকা থেকে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মিশর বলছে, লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের আবারও বাস্তুচ্যুত করা নতুন যুদ্ধের জন্ম দেবে। অন্যদিকে, জর্ডান বলছে, এতে করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

এই যখন অবস্থা, তখন নতুন করে আরও একটি নির্বাহী আদর্শ জারি করে বিশ্বব্যাপী হইচই ফেলে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোকে টার্গেট করে ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নেয় আইসিসি। মার্কিন নাগরিক কিংবা মিত্র দেশগুলোতে আইসিসির হয়ে তদন্তে যারা সহযোগিতা করবে, স্বপরিবারে তাদের আর্থিক খাতে ও ভিসাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাকে কখনই নোবেল প্রাইজ দেবে না। অথচ আমি নোবেল পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু তারা কখনই দেবে না।’

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য না হলেও, এতে করে আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীদের ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে, বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও, ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে সন্তোষ জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। গেল বছরের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তারা, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সঙ্গে আমাদের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। যে প্রসিকিউটর নিজেই যৌন নিপীড়নের মামলা থেকে অব্যাহতি চাইছিলো। তারা ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করতে চাইছিলো।’

এদিকে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার একমাস না পেরোতেই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসেছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি আর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অর্থয়ান নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রথমেই টার্গেট করলেন দেশটির জ্বালানি খাতকে। কয়েকজন ব্যক্তি আর ট্যাঙ্কারের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। যারা চীনে প্রতিবছর লাখ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল রপ্তানিতে সহযোগিতা করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠানগুলো চীন ছাড়াও ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে জ্বালানি তেল রপ্তানির সঙ্গে সম্পর্কিত। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে।

যদিও পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বলেন, ডোনাল্ড ট্রাস্পের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আসতে প্রস্তুত তেহরান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যুদ্ধ করতে আমরা চাই না। পরমাণু অস্ত্র আমরা তৈরি করছি না। ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন। এই দেশে কেউ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। প্রতিরক্ষা নীতিমালায় আছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই লেবাননের উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরেও অব্যাহত আছে ইসরাইলি আগ্রাসন।

ইএ