বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত ন্যাটো সদর দপ্তরে জোটটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মিলন মেলায় রূপ নেয় মঙ্গল ও বুধবার। ন্যাটো জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে হওয়া দু'দিনের বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
রুশ হামলার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের অবকাঠামো রক্ষায় বিমান প্রতিরক্ষা সহায়তায় অগ্রাধিকার দিতে সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ন্যাটো প্রধান। এছাড়া ২০২৪ সালে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা সহায়তায় ৪০ বিলিয়ন ইউরোর আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিতেও কাজ চলছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে লড়াই সক্ষমতা বাড়াতে ইউক্রেনে সৈন্য বল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো নিরাপত্তা সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে শুরু হবে। তবে ইউক্রেনকে লড়াই টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই আরও বেশি কিছু করতে হবে। এই সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তনে সহায়তাও বাড়াতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি-ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইউক্রেনকে আরও সংগঠিত করার বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসাথে এগুলো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত। যারা ইউক্রেনকে রক্ষায় লড়াই করছে তাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ সরঞ্জাম নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে সেনা পাঠানোয় উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ন্যাটো প্রধান। আর এটিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি।
ন্যাটো প্রধান বলেন, ‘রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি যাচ্ছে। যা শুধু আমাদের জন্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডসহ পুরো কোরিয় অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের জন্য ঝুঁকি।’
জরুরি কোনো পরিস্থিতি ছাড়াই সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা হারানোর পথে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউল। এতে দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করায় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানালেন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ইউলের সামরিক আইন প্রত্যাহার করার বিবৃতিকে স্বাগত জানাই। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাখ্যান করার জন্য জাতীয় পরিষদে সর্বসম্মত ভোট ছিল যা তিনি অনুসরণ করেছিলেন। যেকোনো রাজনৈতিক মতপার্থক্যই শান্তিপূর্ণভাবে এবং আইনের শাসন অনুযায়ী সমাধান করতে হবে।’
ন্যাটো সদর দপ্তরে দুদিনের বৈঠক শেষে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ উত্তেজনা নিয়েও কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিজেদের তৈরির সমস্যার কারণে সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের মিত্র রাশিয়া এবং ইরান বিভ্রান্ত অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। যার সদ্ব্যবহার করছে বিদ্রোহীরা। এছাড়া লেবাননের সরকারের মাধ্যমে ইসরাইল এবং হিজবুল্লাহ উভয়ই তাদের যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে চায় বলে জানান অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।