বিদেশে এখন
0

কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ভারতের বায়ুদূষণ

কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ভারতের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। দিল্লির পাশাপাশি বিহার, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ৫৪ কোটি মানুষের বসতিতে জেঁকে বসেছে দূষণ। সুস্থ থাকতে দৈনন্দিন জীবনকে বদ্ধ ঘরে আটকে ফেলছেন এই বিপুলসংখ্যক মানুষ।

শুধু সর্দি-কাশির মতো স্বল্পস্থায়ী নয়, ক্যান্সার-কার্ডিওভাস্কুলার রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও প্রাণঘাতী জটিলতারও বড় কারণ বায়ুদূষণ। বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য, শুধু ২০২১ সালে ভারতে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি।

চলতি মাসে গুরুতর বায়ুদূষণের কবলে ভারতের রাজধানী দিল্লির ৩ কোটি বাসিন্দা। গত ১৮ নভেম্বর নগরীর বায়ুমান সূচক এক হাজার ছাড়িয়ে যায়, যেখানে মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ মাত্রা ৩শ'। এমন পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকাই দায় দিল্লিবাসীর জন্য।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যখন আমাদের গ্রামে সকাল বেলা হাঁটতে যাই আমরা, পরিষ্কার-সতেজ বাতাসে শ্বাস নিয়ে খুব ইতিবাচক বোধ হয়। বুঝতে পারি যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিছু হলো। আর দিল্লিতে দূষণ এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমার চোখ জ্বলে, দম বন্ধ লাগে, গলায় ব্যথা হয় এ বাতাসে।’

আরেকজন বলেন, ‘অনেক মানুষ ভুগছে। শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে, বড়রা সকালে হাঁটতে যেতে পারছে না। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।’

দিল্লি থেকে দেড়শ' মাইল দূরে ভারতের প্রথম পরিকল্পিত নগরী চন্ডিগড়েও এক মাসের বেশি সময় ধরে দূষণের মাত্রা নিরাপদ সীমার অন্তত ১৫ গুণ। সবচেয়ে দূষিত রাজ্য বিহার, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ৫৪ কোটির বেশি মানুষের বসতি।

বিষাক্ত ধোঁয়া আর বাতাসে দূষণের তীব্রতায়, না পারতে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না নগরবাসী। সুস্থ থাকতে, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যারা নিয়ম করে শরীরচর্চা করেন, তারাও দৈনন্দিন জীবনকে আটকে ফেলছেন বদ্ধ ঘরে।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যখন দৌড়াই, আমার শ্বাসকষ্ট হয়। নিজের শতভাগ দিতে পারি না। সাঁতার কাটার সময়ও খালি পানি বিষয় না, শ্বাস নিতে হয় বাতাসে। সবমিলিয়ে গত দু'তিন সপ্তাহ বাইরে বের না হওয়ার চেষ্টা করছি।’

চলতি মৌসুমে দিল্লির বাতাসে ধাতব কণা পিএম টু পয়েন্ট ফাইভের পরিমাণ মানবদেহে নিরাপদ সীমার দেড়শ' গুণ ছাড়িয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে হয়ে উঠেছে তিন কোটি মানুষের বসতি। তীব্র দূষণে শ্বাসপ্রশ্বাস জটিলতাসহ নানা রোগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ লাখো মানুষ। দূষণের জন্য যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়ার পাশাপাশি দায়ী করা হচ্ছে চাষের জমিতে আগাছা পোড়ানোকে।

সুইস সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, গেলো বছর বিশ্বের দূষিততম ১০ নগরীর আটটিই ইন্দো-গ্যাঞ্জেটিক সমভূমি অঞ্চলে; ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে যার বিস্তৃতি, রয়েছে পাকিস্তান আর নেপালেরও অংশবিশেষ।

ইএ