শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত, ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর সিজারিয়ায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে এসে পড়ে দুটি ফ্ল্যাশ বোমা। এতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর একই বাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরানপন্থি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।
এক মাস না যেতেই, দ্বিতীয়বারের মতো বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবন লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। কারণ এবারের হামলার জন্যও ইরানের প্রক্সি গ্রুপগুলোকেই দায়ী করছে ইসরাইল। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে বোমা বিস্ফোরণটি বাসভবনের বাগানে হওয়ায় এবং ওই সময় নেতানিয়াহু ও তার পরিবার সেখানে না থাকায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইরান এবং তার প্রক্সি বাহিনীর নেতানিয়াহুকে হত্যার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে, নিরাপত্তা বাহিনী ও সংস্থাকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। এমনকি এই ঘটনাকে সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে বলেও মন্তব্য করে তিনি।
এদিকে শনিবার সারাদিনে লেবাননে ১৪৫টি বোমা নিক্ষেপ করেছে ইসরাইল। এছাড়াও হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার নামে বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় আগ্রাসনের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে স্থল অভিযানে থাকা ইসরাইলি বাহিনী। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৪শ' ৫০ ছাড়িয়েছে। বিপরীতে ইসরাইলের হাইফা এলাকা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এসব হামলায় ইসরাইলের সামরিক ঘাটি, একটি উপাসনালয় এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ এবং বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণহানি ৪৩ হাজার ৮শ' ছাড়িয়েছে। ঘনীভূত হচ্ছে মানবিক সংকটও। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমেরিকান সহযোগীরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসরাইলকে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও সময় দিয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, গাজা থেকে যতটা সম্ভব ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করা এবং এই অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণভাবে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের অযোগ্য এলাকায় পরিণত করা।’
এদিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর তথ্য বলছে, গাজায় আগ্রাসন চালানোর সময় গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ৩৭৬ সেনা নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ছাড়াও, অধিকৃত পশ্চিমতীরেও দখলদারিত্ব অভিযানে বর্বরতার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরাইল। আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ও যানবাহনে।