জলবায়ু সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বিশ্বনেতাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য শুরু করেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা। দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের ক্ষুদ্র এই দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের অভিযোগ, বড় বড় দেশের নেতারা কপ টোয়েন্টিনাইনে এসে ভালো সময় কাটাচ্ছেন, লাউঞ্জে বসে কফি খাচ্ছেন। অথচ যে উদ্দেশ্যে আজারবাইজানের বাকুতে তারা জড়ো হচ্ছেন তার কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গেল নভেম্বরে দুবাই কপ সম্মেলনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ আরও বেড়েছে এমন মন্তব্যও করেছেন আলবেনিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান।
চীনা প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত থাকলেও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রিমিয়ার ডিং সুয়েসিয়ান। বলেন, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আরও বেশি আর্থিক বরাদ্দ পাঠানো প্রয়োজন এবং এই উদ্যোগ উন্নত রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আর, প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার পূর্ভাবাস দিলেও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা বাইডেন প্রশাসনের জলবায়ু বিষয়ক প্রতিনিধির।
যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক প্রতিনিধি জন পোডেসটা বলেন, ‘একটা জরুরি প্রশ্ন সামনে এসেছে। আমরা কি টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটবো নাকি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ করব। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের 'ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক ফিন্যান্স' শীর্ষক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৪ থেকে প্রতিবছর ১১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হবে, যা দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে।’
চীনের ভাইস প্রিমিয়ারের ডিং সুয়েসিয়ান বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকেও সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ চীন তার নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করবে। ২০৬০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনে দেশে কার্বনের নিঃসরণের মাত্রা নিউট্রাল করা হবে।’
যদিও রাশিয়ার দাবি, বৈশ্বিক উষ্ণতার দোহাই দিয়ে একটি অপশক্তি বিশ্বজুড়ে অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে। অনুন্নত দেশগুলোর পক্ষে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নব্য সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো উন্নত রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিনিয়ত বিপদে পড়ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অভিযোগ করেন, বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয় তার ৮০ শতাংশই করে জি টুয়েন্টি জোটভুক্ত দেশগুলো।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আপনাদের রাগ করার অধিকার আছে। আমি নিজেও রেগে আছি। আপনাদের সাথে মারাত্মক অন্যায় করা হচ্ছে। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় আপনাদের উপকূল তলিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছেন। অর্থনীতি থমকে আছে। উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারছেন না।’
তবে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু নীতিতে ভারসাম্য আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলনি। এছাড়া, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এছাড়াও, কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়া অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও জোটের সহযোগিতা চেয়েছেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারি। আর সাম্প্রতিক বন্যার উদাহরণ দিয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানচেজ বলেন, দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা ও মহামারি প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি ও সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সংস্কৃতি চালু করতে হবে।