বিদেশে এখন
0

আইনজীবী থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, কামালা হ্যারিসের ঘটনাবহুল জীবন

যুক্তরাষ্ট্র তথা পুরো বিশ্বের প্রভাবশালী নেতার কাতারে নিজেকে দাঁড় করানোর পেছনে কামালা হ্যারিসের রয়েছে ঘটনাবহুল ও বর্ণিল সফর ইতিহাস। অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া কামালার বেড়ে ওঠা থেকে কর্মজীবন এবং সেখান থেকে মার্কিন রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

মার্কিন রাজনীতিতে চমক দেখানো এক নারী কামালা হ্যারিস। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রানিংমেট হিসেবে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় ইতিহাস রচনা করেছেন।

প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে এবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নেমে যুক্তরাষ্ট্র তথা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কামালা। অবশ্য ২০২০ সালেও দলটি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রানিংমেট হয়েই মার্কিন রাজনীতির স্পটলাইটে ফিরে আসেন কামালা।

কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও মার্কিন রাজনীতিতে কামালা হ্যারিস যে আধিপত্য বিস্তার করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বলছে, ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একজন ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে পা রাখেন কামালা।

অঙ্গরাজ্যটির ৩২তম অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এরপর একই অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে মার্কিন সিনেটর হন ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের জন্য।

ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সাধারণ সদস্য হয়েও এভাবেই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে দলের আস্থা অর্জন করেন কামালা। নিজেকে নিয়ে গেছেন মার্কিন প্রভাবশালীদের কাতারে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় খোদ জো বাইডেনই বলেছিলেন, কামালা স্মার্ট, অভিজ্ঞ এবং একজন প্রমাণিত যোদ্ধা।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিকিৎসাগত কারণে একটা মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়েছিল। সেই সময় ৭৫ মিনিটের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন হ্যারিস।

বয়সের কারণে নানা আলোচনা সমালোচনায় এবারের নির্বাচন থেকে জো বাইডেন সরে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান কামালা। প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় নিজের নির্বাচনী প্রচার অনেকটা দেরিতে শুরু করেও জনমত জরিপে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে কামালা।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আইনে ডক্টরেট এবং হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব হিউম্যান লেটারস ডিগ্রি অর্জন করেছেন হ্যারিস। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থা থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত সম্পর্কের মতো রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার ছিলেন কামালা।

২০১৪ সালে স্বামী ডাগ এমহফরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কামালা হ্যারিস। ডাগ এমহফও একজন আইনজীবী। পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কামালা হ্যারিস এলি ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, রোববারের নৈশভোজের মধ্য দিয়ে পারিবারিক সময় কাটান তারা।

১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে অভিবাসী যুগল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কামালা। তার মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং বাবা ছিলেন জ্যামাইকান আমেরিকান। কামালা ছোট থাকতেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর মা, শ্যামলা গোপালন হ্যারিসের কাছেই বড় হন তিনি।

আত্মজীবনী ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড’-এ কামালা লিখেছেন, তার মা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি দুজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে লালন পালন করছেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও যাতে কামালা ও তার বোন আত্মবিশ্বাসী এবং গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হয়ে উঠতে পারেন তা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাদের মা। কামালাও যে মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হেঁটেছেন, তার প্রমাণ মেলে আইনজীবী থেকে মার্কিন রাজনীতিতে বর্ণিল এই সফরের মধ্য দিয়ে।

এএম