বিদেশে এখন
0

দুর্দান্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভোটের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রবাসী

অর্থনীতি, সীমান্ত সংকট আর অভিবাসন- তিন ইস্যুতে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পেছনে ফেলেছেন কামালা হ্যারিস। দুর্দান্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভোটের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রবাসী। তবে জরিপের ফল শেষ পর্যন্ত সত্য হলে হোয়াইট হাউজের চাবি যাবে কামালার হাতেই।

হাতছানি দিচ্ছে হোয়াইট হাউজ। প্রস্তুতি সাড়ে তিন মাসের। প্রতিযোগিতা একদিনের। শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা পড়বে কে, স্বপ্ন ধরা দেবে কাকে? শেষ মুহূর্তের জরিপ বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে মসনদের দখল নিয়ে এক তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী।

শুরুতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেশ ভালো ব্যবধানে পেছনে ফেলেছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস। কিন্তু এনবিসি নিউজের সবশেষ জাতীয় জরিপে স্পষ্ট, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মাত্র দুই শতাংশ ভোটারের হাতে। এদেরকে বাদ দিলে সমান অবস্থানে কামালা ও ট্রাম্প।

রাষ্ট্রপ্রধানের ভাগ্য নির্ধারণে অর্ধশত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে শীর্ষে প্রতিযোগিতাপূর্ণ সাত অঙ্গরাজ্য। অর্থাৎ সুইং স্টেট বা ব্যাটলগ্রাউন্ড, যেখানে ভোটারদের সিদ্ধান্ত দোদুল্যমান। ভোটের আগে শেষ সময়ের প্রচারণায় এসব অঙ্গরাজ্যেই দুই প্রার্থীর পা পড়েছে বারবার।

নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের সবশেষ জরিপ বলছে, সুইং স্টেটগুলোতে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোটের পেনসিলভেনিয়াসহ দু'টিতে ট্রাম্প ও কামালা সমান অবস্থানে। আলাদাভাবে পাঁচটিতে এবং সাত অঙ্গরাজ্যে গড়ে প্রায় দুই শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে কামালা; ট্রাম্প এগিয়ে নেই একটিতেও। ২৪ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত এসব জরিপে অংশ নিয়েছেন সাত অঙ্গরাজ্যের প্রায় আট হাজার মানুষ।

সারা দেশের পাশাপাশি বিশেষভাবে সুইং স্টেটগুলোতে বড় নির্বাচনী ইস্যু অর্থনীতি, সীমান্ত সংকট ও অভিবাসন। ফলে বারবার বিভিন্ন গোষ্ঠীর অভিবাসীদের নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প-কামালা। এনবিসি'র জরিপে অন্যতম প্রধান দুই ইস্যুতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও গণতন্ত্রের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এগিয়ে কামালা। বিশেষ করে গর্ভপাতের অধিকারের প্রশ্নে নারীদের সমর্থনে বড় ব্যবধানে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।

সামগ্রিকভাবে জরিপে কামালা ট্রাম্পকে পেছনে ফেললেও, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভিবাসী ইস্যুতে ভোটারদের সঙ্গে দূরত্ব বেশি কোন প্রার্থীর, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখন পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের ৭৮ শতাংশ এবং হিস্প্যানিকদের ৫৬ শতাংশ ভোট ধরে রেখেছেন কামালা, কিন্তু ২০১৬ ও ২০২০ সালের বিগত দুই নির্বাচনে এ পাল্লা আরও ভারী ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির।

ইসরাইলি আগ্রাসনে ক্ষিপ্ত এবং বর্তমান প্রশাসনের প্রতি হতাশ বলে কামালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন আরব-আমেরিকানদের একটি বড় অংশও। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী নিজের ভারতীয় পরিচয়ের বদলে কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় নিয়েই বেশি সরব বলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটাররাও নাখোশ। এই সব ভোট এবার চলে যেতে পারে ট্রাম্পের ঝুলিতে। আবার এশীয় আমেরিকানদের মধ্যে চীনা বংশোদ্ভূত ভোটাররা শঙ্কায়, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ফের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াবে কিনা চীন-যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অঙ্গরাজ্যগুলোকে ভাগ করা হয় তিনটি ভাগে- লাল, নীল এবং সুইং বা দোদুল্যমান । রিপাবলিকান অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যগুলো লাল, যেখানে ১৯৮০ সাল থেকে টানা জিতেছে রিপাবলিকান পার্টিই। অন্যদিকে ১৯৯২ সাল থেকে যেসব অঙ্গরাজ্যে আধিপত্য ধরে রেখেছে ডেমোক্র্যাটরা, সেগুলো নীল। এই লাল ও নীল অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের ফল অনুমানযোগ্য বলে, অনুমানযোগ্য নয় বা কোনো নির্দিষ্ট দলের একক আধিপত্য নেই- এমন অঙ্গরাজ্য, অর্থাৎ সুইং স্টেটসগুলোকে ঘিরেই আবর্তিত মার্কিন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রধান সব ইস্যু, অর্থনীতি থেকে অভিবাসী- আলোচনায় সাত সুইং স্টেটসেই।

ইএ