বিদেশে এখন
0

নতুনভাবে প্রস্তুত হচ্ছে হিজবুল্লাহ

ইসরাইলি আক্রমণে নেতৃত্ব গুঁড়িয়ে গেছে হিজবুল্লাহ'র। তাও হার মানতে নারাজ গোষ্ঠীটি। নিচ্ছে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি। রকেট হামলা আর স্থল অভিযানের নির্দেশনা দিতে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে নতুন সামরিক কমান্ড। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের যোদ্ধারা এরই মধ্যে কথিত 'অপারেশনস রুম' থেকে নির্দেশনা পাচ্ছে এবং যুদ্ধের ভিত্তি গোপন সুড়ঙ্গ। এদিকে, নাসরাল্লাহ'র উত্তরসূরি সাফিউদ্দিনকে হত্যার দাবির এক সপ্তাহ পর এখনও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলের তিন সপ্তাহের বিধ্বংসী হামলায় ব্যাপক শক্তি হারিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তিন দশকের বেশি সময় নেতৃত্ব দেয়া সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ'র মৃত্যু সবচেয়ে বড় ধাক্কা গোষ্ঠীটির জন্য। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের হঠানোর লক্ষ্যে অনুপ্রবেশ করা ইসরাইলি সেনাদের গোষ্ঠীটি কীভাবে প্রতিহত করে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় হিজবুল্লাহ'র মিত্ররা।

ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ'র ভাণ্ডারে এখনও রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অস্ত্রের মজুত। হিজবুল্লাহ ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশেষ করে অস্ত্রভাণ্ডারে সবচেয়ে শক্তিশালী ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটিই এখনও ব্যবহার করেনি হিজবুল্লাহ। যেখানে টানা বিমান হামলা চালিয়ে গোষ্ঠীটির অস্ত্রসক্ষমতা তলানিতে নিয়ে আসার দাবি করছে ইসরাইল।

যুক্তরাজ্যের সামরিক কৌশল বিষয়ক বিশ্লেষক পল মুরক্রাফট বলেন, ‘সবটা নির্ভর করছে ইরান কী করে, তার ওপর। ইরান তো এখনও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া থেকে সংযত রয়েছে।’

২৭ সেপ্টেম্বর নাসরাল্লাহসহ বেশ ক'জন শীর্ষ হিজবুল্লাহ নেতা ও ইরানের এক কমান্ডার নিহতের পর প্রথম কয়েকদিন বেশ টালমাটাল ছিল হিজবুল্লাহ'র কমান্ড। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিয়া মুসলিম গোষ্ঠীটি নতুন 'অপারেশনস রুম' প্রতিষ্ঠা করে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ'র মাঠ পর্যায়ের কমান্ডারসহ দু'টি সূত্র।

বলা হচ্ছে, ইসরাইলের বিরামহীন হামলার মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছে কথিত নতুন কমান্ড সেন্টারটি। যে কারণে লেবাননের দক্ষিণে অবস্থানরত হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এখনও কেন্দ্র থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী রকেট হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যেতে পারছে। তৃতীয় একটি সূত্র বলছে, এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহ'র লক্ষ্য দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শত্রুপক্ষ অর্থাৎ ইসরাইলের ক্ষতিবৃদ্ধি এবং ইসরাইল সরকারকে চাপে ফেলা।

এদিকে, নাসরাল্লাহ নিহতের এক সপ্তাহের মাথায় তার সম্ভাব্য উত্তরসূরী হাশেম সাফিউদ্দীনকেও ইসরাইল হত্যা করার পর নতুন নেতার নামও প্রকাশ করেনি হিজবুল্লাহ। রয়টার্স বলছে, হিজবুল্লাহ'র নতুন কমান্ডের ক্ষেত্র খুব ছোট হলেও সরাসরি মাঠ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ রাখছে তারা। নতুন এ নেতৃত্ব পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করছে বলে এর ধরন বা যোগাযোগের কাঠামো সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না কিছুই।

পল মুরক্রাফট বলেন, ‘আগে নেতা নিহত হয়েছিলেন বলে হাসান নাসরাল্লাহ ক্ষমতায় এসেছিলেন। এরকম আরও অনেক নেতা আছেন। হিজবুল্লাহ একটি আন্দোলনের নাম। এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বরং আরও বড় কিছু।’

হিজবুল্লাহ'র অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি সূত্র বলছে, বর্তমানে যোগাযোগ রক্ষায় একটি স্থায়ী ফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে গোষ্ঠীটি। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গুপ্তচররা দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে হাজার হাজার হিজবুল্লাহ যোদ্ধার ব্যবহৃত পেজার, ওয়াকি-টকি, স্মার্টফোনে গোপনে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে গেলো মাসে একসাথে সবগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটালে ভেঙে পড়ে গোষ্ঠীটির যোগাযোগ অবকাঠামো। কিন্তু তখনও হামলা থেকে বেঁচে যায় স্থায়ী ফোন নেটওয়ার্কটি, যা কাজে লাগছে এখন।

ইসলামপন্থি প্রতিরোধকামীদের কথিত এই কমান্ড সেন্টার বা অপারেশনস রুমের স্বাক্ষরকৃত এক বিবৃতিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, ইসরাইলি গোয়েন্দাদের নতুন অনুপ্রবেশ রুখতে কাজ করছে হিজবুল্লাহ; ইসরাইলি সেনারা কল্পনাও করতে পারবে না, এমন জায়গা থেকে তাদের দেখা ও শোনার মাধ্যমে চলছে অব্যাহত নজরদারি। মূলত এই বিবৃতির মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্বের অস্তিত্ব প্রথমবার স্বীকার করে হিজবুল্লাহ, কিন্তু কবে, কোথায় এটি প্রতিষ্ঠিত কিংবা সদস্য কারা- গোপন রাখা হয় সবই।

রয়টার্সের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই সূত্র হিসেবে উল্লিখিত মাঠ পর্যায়ের কমান্ডারের অস্তিত্ব বানোয়াট বলে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ'র মিডিয়া বিভাগ। এদিকে, সাফিউদ্দিনকে হত্যার দাবির এক সপ্তাহ পর এখনও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ‘বৈরুতের আল-দাহিয়া এলাকায় হিজবুল্লাহ'র গোয়েন্দা কার্যালয়ে আমরা হামলা চালিয়েছিলাম। এটি হিজবুল্লাহ'র গোয়েন্দা প্রধান আবু আব্দুল্লাহ মুর্তাদার কমান্ড সেন্টার ছিল। আমরা জানি যে তার সাথেই ছিলেন হাশেম সাফিউদ্দিন। কিন্তু হামলায় তারা মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন, তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। হিজবুল্লাহ তথ্য গোপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

অন্যদিকে, স্থল অভিযানের অংশ হিসেবে লেবাননের ভেতরে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হাজারও ইসরাইলি সেনা। হিজবুল্লাহ ও ইসরাইল- দু'পক্ষেরই তথ্য, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক রয়েছে হিজবুল্লাহ'র।

ইসরাইলের সঙ্গে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকেই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কটির পরিধি বাড়িয়েছে হিজবুল্লাহ, তথ্য থিংক ট্যাংক আলমার। ইসরাইলের হিসাবে, এসব সুড়ঙ্গের বিস্তৃতি কয়েক হাজার কিলোমিটার। এসব সুড়ঙ্গকে ঘিরেই হিজবুল্লাহ'র চলমান রণকৌশলের ভিত্তি উল্লেখ করে হিজবুল্লাহ'র মাঠ পর্যায়ের কমান্ডারের দাবি, বহু বছরের পরিশ্রমে দাঁড়িয়েছে এই গোপন সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক।

ইএ