১৯৯২ সালে ইসরাইলি বিমান হামলায় তৎকালীন হিজবুল্লাহ প্রধান আব্বাস আল-মুসাবির মৃত্যুর পর সংগঠনটির দায়িত্বে আসেন হাসান নাসরাল্লাহ। তার ৩২ বছরের নেতৃত্বে সংগঠনটি রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। তিন দশক পর নাসরাল্লাহকেও প্রাণ দিতে হলো ইসরাইলি বাহিনীর হাতে।
এদিকে, হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেল আবিব। এমন পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতাকে হারিয়ে অনেকটাই দিশেহারা হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। হিজবুল্লাহ মানেই নাসরাল্লাহ- এই মন্ত্রেই চলতো সংগঠনটি। এবার নতুন নেতা খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না তাদের জন্য। আপাতত আলোচনায় আছে দুই শীর্ষ নেতার নাম।
প্রয়াত নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই হাশেম সাফিউদ্দীনকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে জন্ম নেয়া হাশেম শিয়া ধর্মে নাসরাল্লাহর সঙ্গে দীক্ষা নেন। হিজবুল্লাহ গঠনের শুরুর দিকে দুইজন একইসঙ্গে যোগ দেন সংগঠনটিতে।
শিয়া পরিবারের সন্তান হিসেবে লেবাননের রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রেখেছেন তিনি। তার ভাই আবদুল্লাহ হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে ইরানে কাজ করেন। তেহরানের সঙ্গে হাশেমের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। প্রয়াত শীর্ষ ইরানি নেতা কাসেম সোলেইমানির আত্মীয় হন তিনি। হিজবুল্লাহর মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন তিনি। তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন যোগাচ্ছে ইরান।
হিজবুল্লাহ নেতা হাশেম সাফিউদ্দীন বলেন, ‘আগ্রাসনের জন্য ইসরাইলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। নাসরাল্লাহ হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। আমরা বেশি কথা বলতে চাই না। নিজেদের প্রতিরোধ করে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করা হবে।’
এদিকে, ৭১ বছর বয়সী নাইম কাসেম হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ৩০ বছর ধরে সংগঠনটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল পদে আছেন তিনি। এবার মহাসচিব পদের জন্য তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। হিজবুল্লাহর অন্যতম আলেম হিসেবে বিবেচনা করা হয় নাইম কাশেমকে।
শিয়া রাজনীতিতে নাইম কাসেমের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। লেবাননের শিয়া গোষ্ঠীর আমাল মুভমেন্টে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। একজন ধর্মীয় পরামর্শদাতা হিসেবেও লেবাননে তিনি সুপরিচিত। হিজবুল্লাহর শিক্ষা এবং সংসদীয় কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব তার কাঁধে। তিনি লেবাননের সূরা কাউন্সিলেরও একজন সদস্য।
হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাইম কাসেম বলেন, ‘কোনো ধরনের হুমকি আমাদের দমাতে পারবে না। বিপদকে আমরা কখনোই ভয় করি না। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে আমাদের সমস্ত সামরিক শক্তি।’
বিশ্লেষকদের মতে, শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে হিজবুল্লাহ। দীর্ঘ মেয়াদে সংগঠন টিকিয়ে রাখতে নাসরাল্লাহ'র বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে দ্রুত।