ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। হিজবুল্লাহকে লেবাননে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ দেশটির সেনাবাহিনীর পাশাপাশি একমাত্র তাদেরই নিজস্ব শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী আছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
হিজবুল্লাহ প্রধান নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে লেবাননের বাসিন্দাদের মাঝে। তার মৃত্যুতে হতবাক সবাই। লেবানন ও হিজবুল্লাহর জন্য বিরাট ক্ষতি বলে মনে করছেন লেবানিজরা। নাসরাল্লাহ'র এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তারা।
লেবানিজ একজন বলেন, ‘নাসরাল্লাহ'র মৃত্যুর সংবাদটি মর্মান্তিক। তিনি আমাদের দেশের অভিভাবক ছিলেন। এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। লেবাননের প্রায় সব জনগণ তার উপর নির্ভর করে ছিল।’
শোকের ছায়ায় ভাসছে ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই নাসরাল্লাহকে প্রাণ দিতে হলো। গাজা উপত্যকার গণহত্যায় গোটা বিশ্ব চুপ থাকলেও, নাসরাল্লাহর নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী।
ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘হাসান নাসরাল্লাহ স্বাধীনতার জন্য শাহাদাত হয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।’
আরেকজন বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর দায়ে নাসরাল্লাহকে প্রাণ দিতে হলো। তিনি ফিলিস্তিনিদের মনে অমর হয়ে থাকবেন।’
নাসরাল্লাহ'র মৃত্যুতে শুধু হিজবুল্লাহ নয়, বড় ধাক্কা খেয়েছে ইরানও। হত্যার নিন্দা জানিয়ে তেহরানে বৃষ্টির মধ্যেও বিক্ষোভে নামেন ইরানের শত শত মানুষ। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এ ঘটনায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।
ইরানিদের একজন বলেন, ‘নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ অবশ্যই নিতে হবে। অত্যাচারী ইসরাইল রাষ্ট্র একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।’
আরেকজন বলেন, ‘মুসলিম বিশ্ব এক না হলে সমস্ত ইসলামিক দেশেই শত্রুরা আক্রমণ চালাবে। এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
এদিকে, নাসরাল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর একদল ইসরাইলি উল্লাসে ফেটে পড়েন। তবে, হামাসের হাতে বন্দিদের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের মতে, নাসরাল্লাহর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইসরাইলের বিজয় নিশ্চিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও উস্কে দেবে। আর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে লেবানন ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎও।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ফিরাস মাকসাদ বলেন, ‘নাসরাল্লাহর মতো ক্যারিশম্যাটিক নেতার বিকল্প খুঁজে পাওয়া হিজবুল্লাহর পক্ষে সত্যিই কঠিন কাজ হবে। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের সদস্যরা হতাশায় পড়তে পারেন। হিজবুল্লাহকে এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাপকভাবে পুনর্গঠনের কাজ করতে হবে।’
নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর লেবাননে এবার স্থল আক্রমণ শুরু করতে পারে ইসরাইলি বাহিনী। ভয়ে আতঙ্কে লেবানন ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। এদিকে, প্রতিশোধ নিতে হিজবুল্লাহ ও ইরান পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে ইসরাইলে। যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবে।