বিদেশে এখন
0

সাধারণ অধিবেশনের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বারবারই উঠে আসছে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ। অধিবেশনে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের সমাধান সামরিক হস্তক্ষেপে কখনোই সম্ভব নয়। অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, গাজা ও লেবাননে বর্বরোচিত অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে ইসরাইলি প্রশাসনের আসল চেহারা দেখেছে বিশ্ব। এদিকে ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসন নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া নিজে থেকে যুদ্ধ বন্ধ করবে না।

জাতিসংঘের ৭৯ তম সাধারণ অধিবেশনে যেন বিশ্ব নেতাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে গাজা-ইসরাইল-লেবাননসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গেলো এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত পৌঁছেছে চরমে। সমস্যা সমাধানে বিশ্ব নেতারা বারবারই জাতিসংঘের মহাসচিবকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালেও অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আলোচনা সীমাবদ্ধ সংকটেই।

সাধারণ অধিবেশনে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার দে ক্রু বলেন, কয়েক দশকের মধ্যে মানব সভ্যতায় এটা সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত যেটা ইসরাইল সৃষ্টি করেছে। সামরিক শক্তি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে, এমন ভাবনাই কল্পনা।

বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার দে ক্রু বলেন, 'ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। মধ্যপ্রাচ্যে শত্রুপক্ষ আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর না হয় ইসরাইল নিজেকে রক্ষা করেছিলো। এখন কি করছে? ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। কোন সামরিক শক্তি এই সংঘাতের ইতি টানতে পারবে না।'

এসময় মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, 'বৈরুতে যে সহিংসতা ইসরাইল শুরু করেছে, স্পষ্ট বোঝা যায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতেই এই উদ্যোগ। বিশ্বের জন্য যা ধ্বংসাত্মক। ইসরাইলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাই । মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। দ্বিরাষ্ট্রনীতি একমাত্র সমাধান ।'

এদিকে আলোচনা হয়েছে ইউক্রেন রাশিয়া সংকট সমাধানেও।

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা বলেন, এই যুদ্ধকে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতে পরিণত হতে দিতে পারে না জাতিসংঘ। এই যুদ্ধ বিশ্বের শান্তি আর নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুসিক বলেন, যেকোন আগ্রাসনের জবাব দেয়া হবে, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার চাকর না।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, জাতিসংঘের উচিত রাশিয়াকে এই যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'পুতিন এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অনেক নীতি ভঙ্গ করেছে। নিজে থেকে পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করবে না। জোর করে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে আনতে হবে রাশিয়াকে। রাশিয়ার এই আগ্রাসন জাতিসংঘের নীতিবিরোধী। জাতিসংঘকে কাজ করতেই হবে। উত্তর কোরিয়া আর ইরানের কারণে রাশিয়া এতো সাহস পেয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, ইরান আর উত্তর কোরিয়ার সহযোগিতায় রাশিয়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধ থামাতে আলোচনা নয়, প্রয়োজন সক্রিয় পদক্ষেপ। এসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তেহরান আর পিয়ংইয়ং সহযোগিতা করে এই সংঘাত আরও বাড়াচ্ছে।

এদিকে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিজেদের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ নমনীয় অবস্থানে দেখা যায় ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুজ পেজেশকিয়ানকে। তিনি বলেন, পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে সব স্থবিরতা কাটিয়ে পশ্চিমাদে সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত তেহরান। তবে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানমাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, 'এক বছর ধরে ইসরাইলের আসল চেহারা দেখছে বিশ্ব। এই অঞ্চলে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। যা গণহত্যার সামিল। সারাবিশ্বে বিক্ষোভ হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। ইসরাইল আমাদের বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে, কূটনৈতিকদের হত্যা করেছে। ইসরাইলের বিরোধিতা সবসময় করে গেছি আমরা।'

এসময় ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জিয়া মেলোনি জাতিসংঘকে অবৈধ মানবপাচার রোধ আর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করার আহ্বান জানান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, গাজা ইস্যুতে কোনভাবেই শান্ত থাকতে পারে না জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। এই সংকট সমাধানে ব্যর্থতা জাতিসংঘের জন্য কলঙ্ক বলে উল্লেখ করেন কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি।