বিদেশে এখন

জাপানে পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ

জাপানিদের জন্য নতুন মাথা ব্যথার কারণ 'আকিয়া'। জাপানি ভাষায় আকিয়া শব্দের অর্থ পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত বাড়ি। প্রায় ৯০ লাখ বাড়ি রীতিমতো খালি পড়ে আছে দেশটিতে। শুনতে অবাক লাগলেও, নিউ ইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের জন প্রতি একটি করে বাড়ি লিখে দিলেও ফুরাবেনা এই সংখ্যা।

জাপানে জন্ম ও বিয়ের হার দু'টোই দিনকে দিন কমছে। গত আট বছরে সর্বোচ্চ কম জন্মহার ছিল ২০২৩ সালে। দেশটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের প্রতিবেদন বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটিতে সঙ্গীহীন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়বে। গেল কয়েক বছর ধরে জন্মহার বাড়াতে জনগণকে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে দেশটির সরকার। জনসংখ্যা না বাড়লে এই বিপুল সংখ্যক বাড়ি ঠিক কি কাজে আসবে সেটিও ভাবার বিষয়।

জাপানের জন্মহার। ছবি: এখন টিভি

টোকিও বা কিয়োটো'র মতো বড় শহরগুলোতে পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নয়। জাপানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ১৪ শতাংশ বাড়িই ফাঁকা পরে আছে। জাপানে অনেকেরই একাধিক বাড়ি আছে, আবার কেউ কেউ পেশাগত কারণে পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এমনকি খরচের ভয়ে পুরানো বাড়ি রক্ষাণাবেক্ষণ করতে চান না অনেকে।

জাপানের জনসংখ্যা। ছবি: এখন টিভি

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকিয়া বা পরিত্যক্ত বাড়িগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে তরুণদের। বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলে বসবাস করছেন, প্রত্যন্ত এলাকায় পূর্বপুরুষের বানানো বাড়ির প্রতি তাদের সেই অর্থে কোনো আবেগ-অনুভূতি কাজ করে না। আবার বাড়ির মালিকদের অনেকেরই নেই কোনো বংশধর। এতে করে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কারণ নথি-পত্র ঘেটে কোনো কোনো বাড়ির মালিকেই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

ফলে, গ্রামীণ এলাকাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সরকারের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা বর্তমান প্রজন্ম শহর কেন্দ্রিক জীবনধারায় অভ্যস্ত। পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটি তাদের টানে না। পাশাপাশি এসব বাড়ির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা।

জাপানে পুরানো বাড়ি ভেঙ্গে সংস্কার করার চেয়ে নিয়মিত কর পরিশোধ করা অনেক বেশি লাভজনক। এছাড়া কিছু কিছু বাড়ি এমন দুর্গম এলাকায় যেখানে গণপরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কোনো দোকানপাট নেই।

এদিকে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের তালিকায় একদম ওপরের সারিতে জাপান। যেসব এলাকায় পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা বেশি, সেখানে ভূমিকম্প বা সুনামির মতো দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও বেশি। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজ ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংষ্কারে চরম বেগ পেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

বিদেশ থেকে এসে অনেকেই এসব পুরানো বাড়ি কিনে আধুনিক ধাচের ক্যাফে, রেস্তোরা ও গেস্ট হাউজ বানানোর দিকে ঝুঁকছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া পেলেও বাস্তবতা হচ্ছে এর জন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।

এছাড়া, পরিত্যক্ত বাড়ি দিয়ে ঠাসা এলাকাগুলোতে জমি বা বাড়ি বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না মালিকরা। ফলে বড় ধরনের কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুযোগ নেই এসব এলাকায়। শুধু জাপান নয় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অনেকে দেশেই পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত বাড়ি কেউ কিনতে চায় না।

নগরায়নের ইতিহাস, স্থাপত্যকলা আর বহমান সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এসব আকিয়ার সাথে। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম বাড়ির বয়স দেখে তার কদর করে না। অতি প্রাচীন কোনো ভবনে দিন-যাপন তাদের খুব একটা পছন্দের না। নির্মাণ শৈলীতে আধুনিকতার শীর্ষে থাকা চকচকে বাড়িই তাদের প্রথম পছন্দ। ফলে কালের সাক্ষী হয়ে থাকা বাড়িগুলোর মায়া ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প উপায় জানা নেই কর্তৃপক্ষের।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর