পুরো গাজা উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তুপ। হামাস নির্মূলের নামে প্রতিনিয়ত হামলা করছে ইসরাইলি বাহিনী। এই যুদ্ধে হাজারো ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে নারী-শিশুসহ কয়েক লাখ মানুষ। একে একে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ইসরাইলিরা।
এই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে দুই রাষ্ট্র গঠনের কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। ইসরাইল হবে ইহুদিদের জন্য এবং ফিলিস্তিন হবে মুসলিমদের জন্য। ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এই ধারণা বাস্তবায়নের দিকে এগোতে থাকে। যদিও বাস্তবে রূপ নেয়নি কিছুই। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যের মধ্যে ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
এবার এগিয়ে এসেছে ইউরোপ। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের স্বীকৃতি দেয়ার প্রথম পদক্ষেপ নেয় আয়ারল্যান্ড, মাল্টা ও স্লোভেনিয়া। এবার তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে স্পেন। জুলাইয়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার কথা জানান স্পেনের প্রধানমন্ত্রী।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সমাধানের বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্পেন সবসময় উদ্যোগী ছিল। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে স্পেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে বলে আশা করছি।
গত নভেম্বরে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈঠকে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো জানায়, উপযুক্ত সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়া হবে। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফেরাতে এর কোনো বিকল্প নেই।
তবে ইসরাইল বলছে উল্টো কথা। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে পুরস্কৃত করা। এতে করে চলমান সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হবে। ইউরোপের এই চার দেশকে সতর্ক করেছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের বিষয়ে অন্য কারো মতামত বা নির্দেশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে ইসরাইল। এই সমস্যার জন্য শুধু বিবাদমান দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। ফিলিস্তিনকে একতরফাভাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দিলে সেটা মেনে নেবে না ইসরাইল।
ইসরাইলের ক্ষমতাসীন উগ্র-ডানপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আন্তর্জাতিক চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। গাজার চলমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকার করলেও, ইউরোপের কোনো দেশ এতোদিন পদক্ষেপ নেয়নি।