মশা মারতে আর কামান দাগাতে হবে না। কারণ মশা দিয়েই মশা মরার সফল পদ্ধতি আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান অক্সিটেকের বিজ্ঞানীরা।
ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হিসেবে পরিচিত স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা। ভাইরাসবাহী স্ত্রী এডিসের কামড়ে ডেঙ্গু একজনের শরীর থেকে ছড়িয়ে পরে আরেকজনের শরীরে। তাই মশার বংশবৃদ্ধি রোধে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটির ব্রাজিলের শাখা পরিবর্তন করেছে মশার জিনকে। পুরুষ এডিস মশার দেহে যোগ করা হয়েছে এমন একটি জিন, যার ফলে প্রজননের পর এডিসের স্ত্রী ডিমগুলো পরিপক্ক হওয়ার আগেই মারা যায়।
পরিবর্তিত জিন সম্পন্ন এই পুরুষ মশাগুলোর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ব্রাজিলের বিভিন্ন প্রান্তে। জন্মের চক্র সম্পন্ন করা মাত্রই নতুন মশাগুলো আবার প্রজননে অংশ নিচ্ছে। এতে নতুন করে শুধুমাত্র পুরুষ এডিস মশা তৈরি হচ্ছে যা ডেঙ্গু ভাইরাস বহনে অক্ষম।
অক্সিটেক ব্রাজিল শাখার মহাব্যবস্থাপক ডা. নাটালিয়া ফেরেরা বলেন, এই কাজটি খুবই সোজা। ডিমগুলো রাখার পর বক্সটি পানিপূর্ণ করে রাখি। কয়েকঘণ্টার মধ্যে ডিম থেকে নতুন পুরুষ এডিসের লার্ভা জন্ম নেয়। ১০ দিন পর এরা বেরিয়ে পড়ে। নতুন মশাগুলোর দেহে শুধু পুরুষ এডিস জন্মদানের সক্ষমতা আছে। এতে মশার বংশবিস্তার কমছে।
এডিস মশার জিন পরিবর্তনের সফলতা পেয়েছে অক্সিটেক। ব্রাজিলের সাও পাওলোর বড় শহর সুজানোতে ব্যবহার করা হয়েছে এই পদ্ধতি। ডেঙ্গুর প্রকোপে জরুরি অবস্থা জারি করা শহরটিতে এখন ৯০ শতাংশ মশা কমে গেছে।
ব্রাজিলে কয়েকবছর ধরে আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ। প্রাণ হারান ২৩শ’র বেশি ব্রাজিলিয়ান। চলতি বছরের প্রথম ২ মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ লাখ। জানুয়ারিতে ভেঙেছে ১২ মাস আগের আক্রান্তের রেকর্ড। জরুরি সতর্কতা জারি ও গণহারে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম চালুর পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না পরিস্থিতি।
অক্সিটেক-এর গবেষকরা বলছেন, অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী হবার পাশাপাশি পরিবহনে জটিলতা না থাকায় পদ্ধতিটি পুরো ব্রাজিলজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এতে ব্রাজিলে কমে আসবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। লাতিন আমেরিকার মিশন শেষে বিশ্বব্যাপী কাজ করতে চায় বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠানটি।