ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালিরা। আর সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে স্থায়ী শহীদ মিনার। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকেই এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ওল্ডহ্যাম শহরে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে মোট ৬টি স্থায়ী শহীদ মিনার। শুধু ব্রিটেনেই নয় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেই স্থাপিত হয়েছে একাধিক শহীদ মিনার।
ব্রিটেনের শহীদ মিনারগুলোর মধ্যে আলোচিত লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারটি। যা ১৯৯৮ সালে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র ব্রিকলেন বাংলা টাউনের পাশে নির্মিত হয়। এছাড়াও ব্রিটেনের ওল্ডহ্যাম, বার্মিংহ্যাম, লুটন, কার্ডিফ, ইপ্সউইচ শহরে রয়েছে বাকি শহীদ মিনারগুলো।
ব্রিটেনের পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে স্থায়ী শহীদ মিনার। এর মধ্যে পর্তুগাল, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসে নির্মিত হয়েছে স্থায়ী শহীদ মিনার।
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউকে'র সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের কমিউনিটি থেকে ৫৪টি সংগঠন মিলে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুদানের মাধ্যমে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেছি।'
লিসবনে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ কমিউনিটি ও স্থানীয় সিটি কাউন্সিলের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় স্থায়ী শহীদ মিনার। এর পরের বছর ২০১৬ সালে পর্তুগালের বন্দর নগরী পোর্তো শহরেও প্রতিষ্ঠিত হয় আরেকটি স্থায়ী শহীদ মিনার।
পর্তুগাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রানা তাসলিম উদ্দিন বলেন, 'আমরা চাই ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশে একটি করে শহীদ মিনার হোক; যেখানে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে মানুষ সেখানে বসবাস করতে পারে।
বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো এর সভাপতি শাহ আলম কাজল বলেন, 'পোর্তোর সিটি সেন্টার যেখানে হাজার হাজার পর্যটক যাচ্ছে; সেখানে আমাদের শহীদ মিনার হওয়াতে আজ আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানে।
শান্তি এবং ন্যায়বিচারের শহর হিসেবে খ্যাত নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও দ্য হেগ সিটি কাউন্সিলের উদ্যোগে শহরের ঐতিহাসিক জাউদার পার্কে ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয় স্থায়ী শহীদ মিনার।
নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, 'হেগ মিউনিসিপালিটির তখনকার যে ডেপুটি মেয়র ছিলেন, তার সাথে আলাপ করে একদম কেন্দ্রবিন্দুতে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন এবং সেখানে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হয়। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সমবেত হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদেরকে স্মরণ করা হয়।
ইউরোপজুড়ে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণে স্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করেও ভাষা শহীদ দিবস উদযাপন করেন প্রবাসীরা।