বড় ধরনের খনিজ চুক্তিতে সম্মত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

বড় ধরনের খনিজ চুক্তিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র সফরে চুক্তি সই করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলার তুলে আনার দাবি থেকে আপাতত সরে দাঁড়িয়েছে ওয়াশিংটন। তবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান দাবি সামরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আপাতত দিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন।

যুদ্ধের চতুর্থ বছরের প্রথম প্রহরে ইউক্রেনের একটি বিমানবন্দরে হামলা চালায় রাশিয়া। কয়েকটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং শতাধিক ড্রোন এদিন ভূপাতিত করে কিয়েভ। ইউক্রেনেরও প্রায় একশ' ড্রোন, রকেট বোমা ইত্যাদি ভূপাতিত করে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত থাকার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কি। সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বড় ধরনের খনিজ চুক্তির শর্তে সম্মত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ইউক্রেন। বেশ কিছু শর্তে দুপক্ষের সম্ভাব্য সমঝোতাকে ইতিবাচক হিসেবে মনে করা হচ্ছে বলে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কিয়েভের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ খবর নিশ্চিত করেন। আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওয়াশিংটন সফরে চুক্তি সই করবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুনেছি যে তিনি শুক্রবার আসছেন। তিনি আসতে চাইলে আমারও ভালো লাগবে। আমার সাথে একটি চুক্তিতে সই করবেন তিনি। আমার বুঝতে পারছি যে বড় কোনো চুক্তি হতে যাচ্ছে। অনেক বড় চুক্তি হবে।’

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে এযাবৎ দেয়া সামরিক সহায়তার বিনিময়ে দেশটির খনিজ সম্পদ ব্যবহারে যে ৫০ হাজার কোটি ডলারের রাজস্ব মুক্তির দাবি করেছিল ওয়াশিংটন, সে দাবি থেকে আপাতত সরে দাঁড়িয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য যে সামরিক নিরাপত্তা চেয়েছিল কিয়েভ, সে নিশ্চয়তাও দেয়নি ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতায় তিন বছর ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নভেম্বরে ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পরই ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা স্থগিত করে ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে মিত্রতা ধরে রাখতে তার আগ্রহের জায়গা হিসেবে ইউক্রেনে রেয়ার আর্থ জাতীয় খনিজ সম্পদের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার আলোচনার কেন্দ্রে। যদিও এ খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের খসড়া চুক্তিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম স্টিভেন ফিশ বলেন, ‘ইউক্রেনকে ছয় হাজার কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার পর দেশটির খনিজ সম্পদ ব্যবহার করে ৫০ হাজার কোটি ডলার বের করে নিয়ে আসার যে বুদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র করছে, এর চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা আর হয় না। একে তো এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি একতরফা, তার ওপর ভুললে চলবে না যে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের পশ্চিম ইউরোপীয় মিত্র ও ইউরোপকে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে ইউক্রেন।’

সিরিয়াম-ইউরোপিয়ামসহ ১৭ ধরনের রুপালি শুভ্র ধাতব মৌল পড়ে রেয়ার আর্থ খনিজের তালিকায়। একেবারে দুর্লভ না হলেও প্রকৃতিতে রেয়ার আর্থভুক্ত উপাদানগুলো অভিন্ন অবস্থায় মেলে এবং এগুলোকে আলাদা করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎ শক্তিকে গতিতে রূপ দিতে ব্যবহৃত চুম্বক নির্মাণে দরকার হয় রেয়ার আর্থ, প্রযুক্তি খাতে যার কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে রেয়ার আর্থের ব্যবহার অপরিহার্য।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের রেয়ার আর্থ, নিকেল ও লিথিয়ামসহ ৫০ ধরনের খনিজ ধাতু গুরুত্বপূর্ণ তালিকাভুক্ত। এসব ধাতুর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তালিকায় থাকা ৩৪টি ধাতুর মধ্যে ২২টির মজুত রয়েছে ইউক্রেনে। তাই রেয়ার আর্থের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নজর ইউক্রেনে হলেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতাও। ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলে সোভিয়েত আমলে নির্মিত গ্রাফাইট উত্তোলন প্রকল্পের আধুনিকায়ন শেষবার হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য এমন প্রকল্প থেকে দ্রুত মুনাফা বেশ অসম্ভবই বটে।

ইএ