আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

ট্রাম্প না বাইডেন, কার শাসনামলে মার্কিন অর্থনীতি শক্ত অবস্থায় ছিল?

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে চলছে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই প্রচারণার মূল বিষয় হয়ে ওঠে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা। প্রার্থীরাও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ও একে গতিশীল রাখতে দেশ নানা প্রতিশ্রুতি। এ অবস্থায়, ট্রাম্প নাকি বাইডেন কার শাসনামলে মার্কিন অর্থনীতি শক্ত অবস্থায় ছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির অনেকটাই নির্ভর করে মার্কিন অর্থনীতির ওপর। তাই হোয়াইট হাউজের মসনদে কে বসছেন তা নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকে না বিশ্ববাসীর। প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরাও ভোট টানতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দু'জনেরই করোনা মহামারি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ডেমোক্র্যাট পার্টির দাবি তাদের শাসনামলে মার্কিন অর্থনীতি অনেকগুলো সূচকে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, রিপাবলিকান শিবিরের অভিযোগ, তাদের শাসনামলে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্ত ভিত পেয়েছিল মার্কিন অর্থনীতি, যা পরবর্তীতে ধ্বংস করেছে বাইডেন প্রশাসন। করোনা মহামারি এবং বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর দাবি করছে দুই দলই। ট্রাম্প নাকি বাইডেন কার শাসনামলে বিশ্ব অর্থনীতি ভালো ছিল তা নিয়ে চলছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

জিডিপির হিসেবে দুই প্রেসিডেন্টের আমলেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও করোনার প্রকোপে বৃদ্ধি পায় পণ্যমূল্য, বন্ধ হয়ে যায় বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারপরও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন অর্থনীতি শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। এমনকি পশ্চিমা অনেক দেশের চেয়ে আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছায় মার্কিন অর্থনীতি। বাইডেনের আমলেও এ ধারা অব্যাহত ছিল।

আসন্ন নির্বাচনে দেশটির মূল্যস্ফীতি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের শাসনামলের প্রথম দুই বছরে মূল্যস্ফীতি ৪৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নয় শতাংশের ওপরে পৌঁছায়। বাইডেনের নেয়া ১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের 'আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান' গ্রহণের পর মূল্যস্ফীতি তিন শতাংশে নেমে আসে। তবে এ সময় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। যা ট্রাম্পের আমলের চেয়ে অনেক বেশি।

করোনায় বহু মানুষ চাকরি হারানো পর ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বাইডেন প্রশাসন। ১ কোটি ৬০ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরিকে নিজেদের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে প্রচার করছে তারা। অন্যদিকে ট্রাম্পের মেয়াদের প্রথম তিন বছরে কর্মসংস্থান খাতে যুক্ত হয়েছে ৬৭ লাখ চাকরি। দু'জনের আমলেই নিম্ন বেকারত্বের হার স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল।

কর্মীদের বেতন–মজুরির হার পূর্বসূরি বারাক ওবামার ধারা বজায় রেখেছিলেন ট্রাম্প। তবে এই প্রবণতা করোনার আগ পর্যন্ত বহাল ছিল। বাইডেনের সময় কর্মীদের সাপ্তাহিক গড় আয় দুই শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শ্রমিকদের জীবনধারণে লড়াই করতে হচ্ছে। ৩০টি বড় মার্কিন কোম্পানির শেয়ারমূল্য ট্রাম্পের সময় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। পরে করোনার আঘাতে শেয়ার বাজারেও নামে ধস। বাইডেন ক্ষমতায় এসে এ অবস্থার উন্নতি ঘটান।

এদিকে, বাইডেনের নেয়া অনেক অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস। আয়কর হার কমানো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর মওকুফের আওতা বৃদ্ধি, মূলধনী লাভের ওপর কর কমানোসহ নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। এদিকে, ট্রাম্পের অভিযোগ, কামালা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় গেলে বিশ্বজুড়ে ফের অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে।

মূলত কোভিড মহামারি শেষ না হতেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার শিকার হয় গোটা বিশ্ব। একই প্রবণতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রেও।

এসএস