অস্ত্রোপচার ছাড়াই চোখের ড্রপে ফিরবে দৃষ্টিশক্তি!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি | ছবি: সংগৃহীত
0

ইদানীং বই পড়ার সময় অক্ষরগুলো ঝাপসা দেখছেন? চোখের চশমা ছাড়া মোবাইল স্ক্রিন দেখতে অস্পষ্ট লাগছে? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে বিজ্ঞান কিন্তু বসে নেই। বিজ্ঞানের আবিষ্কার আপনার ফিকে হয়ে যাওয়া দৃষ্টিকে তীক্ষ্ণ করে তুলতে পারে মাত্র এক ফোঁটায়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা নতুন একটি চোখের ড্রপ তৈরি করেছেন। যা বয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর। পাশাপাশি এর ব্যবহার চশমার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকট দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা ‘প্রেসবায়োপিয়া’র সমস্যা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। চল্লিশোর্ধ্ব বেশিরভাগ মানুষকেই এ সমস্যার কারণে চশমা ব্যবহার করতে হয়। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা বয়সজনিত কারণে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধায় ভোগেন। তাদের জন্য এবার সুখবর। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি নতুন উদ্ভাবন এ সমস্যার সহজ ও কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা নতুন একটি চোখের ড্রপ তৈরি করেছেন, যা বয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর এবং এর ব্যবহার চশমার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

‘ইউরোপীয় সোসাইটি অফ ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্র্যাক্টিভ সার্জনসে’র (ইএসসিআরএস) এক সম্মেলনে এ যুগান্তকারী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পিলোকার্পিন এবং ডাইক্লোফেনাক নামক দুটি সক্রিয় উপাদান দিয়ে তৈরি এ ড্রপ ব্যবহারে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই দৃষ্টিশক্তির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।

এ আইড্রপসটি তৈরি করেছে একটি বায়োটেক প্রতিষ্ঠান। যারা দীর্ঘদিন ধরে চক্ষু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ রোগীই ইতিবাচক ফল পেয়েছেন।

আরও পড়ুন:

আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ফর প্রেসবিওপিয়ার পরিচালক ড. জিওভানা বেনোজি এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। মোট ৭৬৬ জন রোগীর ওপর এ ড্রপ পরীক্ষা করা হয়। রোগীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করে প্রতিদিন দু’বার করে ড্রপ দেওয়া হয়। দেখা যায়, ড্রপ ব্যবহারের এক ঘণ্টার মধ্যে রোগীরা দৃষ্টি পরীক্ষার চার্টে অতিরিক্ত দুই থেকে তিনটি লাইন অনায়াসে পড়তে পেরেছেন। ড্রপের কার্যকারিতা দুই বছর পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং লেন্সের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। যার ফলে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। এ নতুন ড্রপটি চোখের পিউপিলকে সংকুচিত করে এক ধরনের ‘পিনহোল ইফেক্ট’ তৈরি করে। এর ফলে চোখের লেন্সের ফোকাস আরও তীক্ষ্ণ হয় ও কাছের বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এ পদ্ধতিটি চশমা বা কন্টাক্ট লেন্সের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

এ ড্রপের প্রধান সুবিধা হলো এর জন্য কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। এটি ব্যবহারের সহজলভ্যতা ও দ্রুত কার্যকারিতা একে চশমার একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে। তবে গবেষণায় কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাময়িক ঝাপসা দৃষ্টি, চোখে জ্বালাপোড়া এবং হালকা মাথাব্যথা। গবেষকরা জানিয়েছেন, এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত গুরুতর নয়। ড্রপ ব্যবহার বন্ধ করলে তা চলে যায়।

বিজ্ঞানীরা এ ফলাফলকে স্বাগত জানালেও সতর্ক করে বলেছেন যে, এ ড্রপের ব্যাপক ব্যবহারের আগে আরও বড় পরিসরে ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন। এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরেই এটি শুধু বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারবে।

তবুও এ নতুন আবিষ্কারটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। যারা বয়সজনিত দৃষ্টি সমস্যায় ভোগেন। যদি এ ড্রপ সফল পরীক্ষা শেষে বাজারে আসে, তবে এটি চশমা ও সার্জারির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দৃষ্টি পরিচর্যায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এফএস