প্রবাস
0

নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তনে ইতালিতে শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কায় প্রবাসীরা

প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও আবেদন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। নতুন নিয়মের আওতায় ২০২৫ সালে শ্রমিক ভিসায় ১ লাখ ৮১ হাজার কর্মী আনার পরিকল্পনা আছে জর্জিয়া মেলোনি সরকারের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়মিত শ্রমিক প্রবেশ আটকানো ও প্রতারক চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসায় ইতালিতে শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

২০২৫ সালে শ্রমিক ভিসায় প্রায় দুই লাখ প্রবাসী কর্মী নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ইতালির শ্রম ও সামাজিক নীতি মন্ত্রণালয়। প্রাক আবেদন শুরু হবে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে আর তা চলবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত। এরপর যাচাই বাছাই শেষে বাতিল করা হবে ত্রুটিপূর্ণ আবেদন।

তবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন করার সুযোগ থাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তি কমবে আগের চেয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকায় অতিরিক্ত যাচাইয়ের মধ্যে পড়তে হবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের আবেদনকারীদের।

সেক্টরভেদে আবেদনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে আলাদা সময়সূচি। কৃষি, পর্যটন ও হোটেল খাতে নির্ধারিত কোটার ৭০ শতাংশ আবেদন জমার সময়সীমা ২০২৫ এর ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি ৩০ শতাংশ আবেদন করার ধার্য করা হয়েছে সময় আগামী বছর অক্টোবরের ১ তারিখ পর্যন্ত। এছাড়া ইতালির বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সহায়তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে দশ হাজার নতুন সহায়ক কর্মী কোটা। এক্ষেত্রে একজন নিয়োগকর্তা সর্বাধিক তিন জন কর্মী নিয়োগ করতে পারবেন।

এছাড়া স্পন্সরের জন্য কর্মীরা আবেদন শুরু করত পারবেন ২০২৫ এর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। আর গৃহস্থলী ও স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি এবং কৃষিখাতে আবেদনের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারিকে ক্লিক ডে হিসেবে ঘোষণা করছে শ্রম মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর কথা রয়েছে।

ইতালির শ্রমিক ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া জটিল ও কঠোর হলেও এতে কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হবে না বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়। বৈধ পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যাবে দ্রুততম সময়ে। চুক্তি নবায়নের সুযোগ পাবেন মৌসুমি শ্রমিকরাও।

তবে বিভিন্ন অনিয়ম ও দালাল চক্রের অপতৎপরতার কারণে ইতালির শ্রমিক ভিসায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। ফলে আবেদন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায়, ইতালি তথা গোটা ইউরোপের শ্রম বাজার হারানোর আশঙ্কা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সংকট সমাধানে বাংলাদেশ-ইতালির কূটনৈতিক সর্ম্পক জোরদারের আহ্বান জানান তারা।

একজন প্রবাসী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে লোক আসুক। ইতালি সরকার যে আইনকানুন করেছে এতে করে আসতে পারবে কি না, এটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’

অন্য একজন প্রবাসী বলেন, ‘যখন নোলস্তা বাংলাদেশে জমা হবে, ভিসার পর যদি টাকা-পয়সা দেন সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে তাহলে আপনারা প্রতারিত হবেন না।’

বাংলাদেশি একজন ইতালি প্রবাসী বলেন, ‘দালাল চক্রর কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ইতালিতে নষ্ট হচ্ছে। এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন ইতালির সরকারের সাথে আলোচনা করা যেন শ্রমবাজারটা ধরে রাখা যায়।’

ইতালির শ্রম বাজারকে আরও উন্নত ও সুরক্ষিত করতে নতুন এই ভিসা প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি নিয়োগকারীরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

এসএস