দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবারও (১ জুন) মানুষজন এসেছেন মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কয়েকদিন অপেক্ষা করেও যেতে পারেননি, কারণ কর্মী ভিসায় দেশটিতে শ্রমিকদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু প্রায় ৬ লাখ করে জনপ্রতি টাকা দিয়েও যেহেতু যেতে পারেননি, এখন এজেন্সিগুলোর কাছে ধরনা দিয়েও পাচ্ছেন না টাকা পাওয়ার আশ্বাস।
আরআই ব্রাদার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কী পদ্ধতিতে টাকা দেওয়া হবে তা নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পাননি তারা। যদিও প্রতিষ্ঠানটি কত টাকা ফেরত দিবে তাও বলতে পারছেন না।
মালয়েশিয়া যেতে অনেকেই ঋণ করে এজেন্সিকে টাকা দিয়েছেন। এখন তাদের কণ্ঠে হতাশা। এক ভুক্তভোগী বলেন, 'আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ১৪ মাস ধরে ঘুরানো হয়েছে। কিন্তু আমি যেতে পারি নাই। টিকিট বাতিল করে দিয়েছে। যার কাছে টাকা দিয়েছিলাম সে সম্পূর্ণ টাকা জমা দেয়নি।'
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, 'আমাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে, ভালো চাকুরি দেওয়া হবে। এখন বলতেছে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে। টাকা ফেরত না দিলে আমরা এখানে আত্মহত্যা করবো।'
এজেন্সিগুলো বলছে, মালয়েশিয়া সরকারকে ৫ হাজার রিঙ্গিত বা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা ভিসা বাবদ দিতে হয়। বাকি টাকা দেওয়া গেলেও ৫ হাজার রিঙ্গিত ফেরানো কঠিন বলে মনে করছেন তারা।
আকাশ ভ্রমণের স্বত্বাধিকারী মনসুর আহমেদ কালাম বলেন, 'আমরা মালয়েশিয়া থেকে ই-ভিসা পেয়েছি অনেক দেরি করে। তখন আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে আমাদের কিছু লোক যেতে পারবে না।'
যেহেতু প্রায় ৩০ হাজারের বেশি কর্মী যেতে পারেননি, ৬ লাখ হিসেবে এই টাকার পরিমাণ প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু ভিসা বাবদ মালয়েশিয়া সরকারকে দিতে হয়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। এ টাকা ফেরত আনা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রিক্রুটিং এজেন্সিকে পদক্ষেপ বেশি নিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমবাজারগুলো যেন এভাবে নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ তাদের।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারপার্সন শাকিরুল ইসলাম বলেন, 'যে কর্মীরা যেতে পারেনি মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে তাদের টাকাটা ফেরত আনতে সরকার একটা উদ্যোগ নিতে পারে।'
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩ মাস সময় বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হলেও এখনও কুয়ালালামপুরের সাড়া মেলেনি। যদিও সকালে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন সময় বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।