শিশু অন্ধত্ব নিবারণে আরওপি সচেতনতা বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা জোরদারের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

জাতীয় কর্মশালা
জাতীয় কর্মশালা | ছবি: সংগৃহীত
1

শিশু অন্ধত্ব নিবারণের লক্ষ্যে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) সম্পর্কে চিকিৎসক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর ব্যবস্থাপনা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ (সোমবার, ৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) অনুষ্ঠিত ‘রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি (আরওপি) স্ক্রিনিং ও রেফারেল সেবা’ শীর্ষক এক জাতীয় কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় এ পরামর্শ দেন তারা।

দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ৫০ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নবজাতক বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও শিশু বিশেষজ্ঞ কর্মশালায় অংশ নেন।

বিএমইউয়ের নবজাতক বিভাগ ও চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনাল-এর সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মশালায় অপরিণত নবজাতকদের অন্ধত্ব প্রতিরোধে বিভিন্ন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আরওপি সম্পর্কে জনসাধারণ এমনকি অনেক চিকিৎসকও পর্যাপ্ত ধারণা রাখেন না। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করাই অন্ধত্ব প্রতিরোধের মূল উপায় বলে তারা মত দেন।’

অনুষ্ঠানে বিএমইউ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ট্রেজারার অধ্যাপক ডা. নাহরিন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবিরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইউনিসেফের হেলথ ম্যানেজার ডা. দেওয়ান মো. এমদাদুল হক এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন:

অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার নবজাতকের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় প্রাথমিক পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় মাতৃস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য, কারণ এতে অকালে শিশুর জন্মের ঝুঁকি কমে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুমৃত্যু কমেছে, কিন্তু আরওপি-জনিত অন্ধত্ব নতুন উদ্বেগ হয়ে উঠছে। মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতক সেবার মানোন্নয়নে বিনিয়োগ জরুরি।’

অধ্যাপক ডা. নাহরিন আখতার আরওপির ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান যেমন অ্যানিমিয়া ও সেপসিস চিহ্নিত ও প্রতিরোধের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অপরিণত জন্ম প্রতিরোধ করতে হবে, যা শিশু মৃত্যুহার ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন কোনো অপরিণত শিশুর জন্ম হয়, তখন আমাদের শিশুটির বিশেষ যত্ন নিতে হবে।’

অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ বলেন, ‘এ কর্মশালা অভিজ্ঞতা বিনিময় ও আরওপি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির প্রয়োগে নতুন গতি আনবে। অরবিস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় রেফারেল কমানোর জন্য কাজ করছে। আমরা প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব দূরীকরণে সব সময় চক্ষু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে আছি।’

কর্মশালার মুল বার্তা তুলে ধরে নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো শিশু যেন অন্ধ না হয়। অপরিণত শিশুর জন্মের উচ্চ হার বাংলাদেশকে আরওপির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।’

চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সময়মতো পরীক্ষা, রেটক্যাম ব্যবহার ও অভিভাবক পরামর্শ আরওপি প্রতিরোধে অপরিহার্য।’

অরবিস ও ইউনিসেফের মতো উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতা আরওপি-জনিত অন্ধত্ব রোধে ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কর্মশালায় বিএমইউয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের ভিট্রিও-রেটিনার সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী আরওপির কারণ, শ্রেণিবিন্যাস, স্ক্রিনিং, চিকিৎসা ও রেটক্যাম ব্যবহারের ওপর আলোচনা করেন।

অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম টেকনোলজি, ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ও রিসার্চ ডিরেক্টর ডা. লুৎফুল হুসাইন আরওপি রেফারেল সার্ভিস ও সাইবারসাইট প্ল্যাটফর্মে প্রাপ্ত আরওপি কোর্স সম্পর্কে জানান। সাইবারসাইট অরবিসের একটি বিনামূল্যের অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ছানি, কর্নিয়া, গ্লুকোমা, শিশু চক্ষু ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

আরওপি হলো অপরিণত নবজাতকের দৃষ্টিহানির অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিশু আরওপির কারণে অন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ শিশু অপরিণতভাবে জন্ম নেয়, যা তাদের আরওপি ঝুঁকিতে ফেলে। বিএমইউ ২০১৩ সালে আরওপি স্ক্রিনিং শুরু করে এবং ২০২১ সালে রেটক্যাম ব্যবহার চালু করে প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা আরও জোরদার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩৫ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া বা ২ কেজির কম ওজনের নবজাতকের জন্মের ২০–৩০ দিনের মধ্যে চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি, না হলে শিশুটি অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এসএস