আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানবো কাঁচা হলুদের ব্যবহারে বা কাঁচা হলুদ খেলে কী কী উপকার এবং ক্ষতি হয়।
কাঁচা হলুদের ব্যবহার
কাঁচা হলুদ রান্না, রূপচর্চা এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। এটি খাবারে মশলা হিসেবে, ত্বক ফর্সা ও দাগমুক্ত করতে এবং বিভিন্ন রোগ যেমন— গ্যাস, অম্বল, বাতের ব্যথা উপশম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ক্ষত নিরাময়, হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং প্রদাহ কমাতেও ব্যবহৃত হয়।
কাঁচা হলুদ চা
হলুদ চা ক্যানসার প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। হলুদের সক্রিয় একটা উপাদান হলো কারকিউমিন। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট একটি কার্যকর অ্যান্টিকার্সিনোজেন পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আদার মতো হলুদের মূল দিয়ে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু চা তৈরি যায়।
কাঁচা হলুদ চা- এর প্রস্তুত প্রণালি:
দুই টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের কাটা মূল বা দুই চা-চামচ হলুদগুঁড়া এক থেকে দুই কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। কম আঁচে চার থেকে পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে।
তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে স্বাদ পরিবর্তন করতে লেবু বা মধু যোগ করা যেতে পারে। এ চা গরম ও ঠান্ডা— দুভাবেই পান করা যায়।
কাঁচা হলুদের ঔষুধি গুণ
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা হলুদ হজমশক্তি বাড়ায়। এজন্য সহজেই খাবার পরিপাক হয়। নিয়মিত হলুদ খেলে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে বদহজমের আশঙ্কা কমে যায়। এর সঙ্গে গ্যাস-অম্বল এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে
হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পার্কিনসনস, আলঝেইমার, টিস্যুর স্থবিরতার মতো অসুস্থতা রোধে সক্ষম। যা আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়। এটি হতাশার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার ঠেকাতে সাহায্য করে
হলুদে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তকণিকাকে নিরাপদ রাখে। ফলে স্তন ক্যান্সার, পাকস্থলী, কোলন ও ত্বকের ক্যান্সার তৈরি হতে পারে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা হলুদের কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধক কোষের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী হয়। রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়া হলুদের প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
জয়েন্ট ভালো রাখে, ব্যথা কমায়
বিভিন্ন কারণে জয়েন্টের ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা বেড়ে যায়। হলুদের শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ব্যথা উপশম করে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা উন্নত করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে জয়েন্টের অস্বস্তি মোকাবিলায় সাহায্য করে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার।
ডায়াবেটিস কমায়
নিয়মিত সকালে কাঁচা হলুদ খেলে দেহের ভেতর কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।
যকৃৎ সুরক্ষিত রাখে
হলুদ যকৃতের নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। লিভারের বহুবৃদ্ধি, হেপাটাইটিস, সিরোসিস, গলব্লাডারের মতো সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।
এছাড়াও কাঁচা হলুদ আলসার সৃষ্টিতে বাধা দেয়। এটি খেলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ত্বকে কাঁচা হলুদের ব্যবহার
হলুদের গুণ অনেক। ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করতে জুড়ি নেই কাঁচা হলুদের। কাঁচা হলুদ বেটে দুধের সরের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগানোর প্রচলন ছিল এক সময়। হলুদে থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ব্রণের সমস্যা দূর করে।
ত্বকে ব্যবহার করার নিয়ম
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য
এক টেবিল চামচ বেসন ও এক টেবিল দইয়ের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ কাঁচা হলুদ বাটা বা গুঁড়া মিশিয়ে পরিষ্কার ত্বকে মিশ্রণটি লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যাবে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য
দুই টেবিল চামচ কাঁচা হলুদ বাটা বা গুঁড়া নিয়ে এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়া, এক টেবিল চামচ মধু ও প্রয়োজন মতো দুধ নিতে হবে। ভালো করে মুখ ধুয়ে হলুদের মাস্কটি মুখে লাগাতে হবে। তা শুকিয়ে গেলে পানির ঝাপটা দিয়ে হাত দিয়ে আলতো করে মাস্কটি উঠিয়ে ফেলতে হবে।
নিষ্প্রাণ ত্বকের জন্য
অনেক সময় ত্বক নিষ্প্রাণ দেখায়। এ ধরনের ত্বকের উপযোগী এ হলুদ মাস্ক। দুই টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের সঙ্গে ওটস গুঁড়া ও দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট রেকে তারপর তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
কালচে দাগ দূর
এক টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ও আলুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগালে কালচে দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়। ত্বকে মিশ্রণটি লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
কাঁচা হলুদের ক্ষতি
ভেষজ ওষুধ হিসেবে হলুদ জনপ্রিয়। সাধারণত কাঁচা হলুদের ঔষুধি গুণই বেশি। কিন্তু এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা মা
কাঁচা হলুদ জরায়ু সংকোচন প্রসারণে সাহায্য করে। ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা আছে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা
হলুদ সেবনে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের পরিবারে কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস
কিছু মুখে খাওয়ার অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে কাঁচা হলুদ। সেজন্য ডায়াবেটিক রোগীদের হলুদ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খেতে হবে।
রক্ত জমাটবাঁধা হ্রাস
কাঁচা হলুদ রক্ত জমাটবাঁধার যে স্বাভাবিক প্রবণতা, তা হ্রাস করে। সেজন্য কোনো অপারেশন করার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে কাঁচা হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হলুদ নেয়ার ফলে অপারেশনের সময় তাদের অধিক রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একই কারণে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খায় তাদেরও কাঁচা হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।





