কোন অভিমানে ঝরে যাচ্ছে পাতারা?
পাতাদের মনেও কি ভর করেছে রাবিন্দ্রীক প্রেম? তারাও কি প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা এ চৈত্রে কারও চোখে সর্বনাশ দেখেছে?
পঞ্জিকার প্রলোভনে বসন্ত উদযাপনের আকাঙ্খা চওড়া হলে প্রকৃতির কাছে সে ইচ্ছা পুরনের সুখবর নেই। দক্ষিণ জানালা খুললে মনে হতে পারে বসন্ত কেবল গণনায়। তবে কি পথ ভোলা পথিকের মত বসন্ত চেপে বসেছে ভুল কোনো ট্রেনে? ঠিকানা বিহীন স্টেশনে পরিত্যাক্ত কোনো বগিতে কি ঝলসে গেছে বসন্তের ফুল?
আবহমান কাল থেকেই ফাগুনের রুপের ঈর্ষার আগুনে পোড়া চৈত্র ডেকে আনে নির্দয় নিদারুণ রোদ। তপ্ত দুপুরে মাথার উপরে জলন্ত সূর্য যেন হয়ে ওঠে আগুনের ফুলকি। রোদের লালচোখ আর উপেক্ষার বিভেদ দেয়াল ভেদ করে বাতাসে দুলতে থাকা রোপা আমন কণ্ঠ উচিয়ে বলে, সময় এখনও বসন্তের। চৈত্র সংক্রান্তির আগেই বাসন্তি ফসল ঘরে তোলার মাধ্যমে বকেয়া, খাজনা আর হালখাতার হিসেব বৈশাখের পহেলা তারিখের আগেই চুকানোর ব্যস্ততা যাদের, এ বসন্ত তাদের জীবন রাঙ্গালো কতখানি?
কৃষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সারের দাম বেশি। এতে আমাদের পোষায় না।’
আরেকজন বলেন, ‘আমরা কখনো কখনো কাঙ্ক্ষিত ফল পাই, আবার কখনো কখনো পাই না।’
মাঘের সন্যাসী ফিরে গেলেও কাটেনি প্রকৃতির ধুসরতা। শীতের কুয়াশা কাটিয়ে বসন্তের বরণ ডালা রঙ্গিন হবার কথা থাকলেও পাতায় পাতায় ধুলোর আস্তরণ। সবুজ হটিয়ে গাছে গাছে এখন কাণ্ডের কঙ্কাল। প্রাচীণ থেকে আধুনিক, বাংলা সাহিত্য ও গানে মনোহরি সৌন্দর্য, প্রেম আর সুদিনের প্রতিনিধি যে বসন্ত হয়ে উঠেছে ঋতুরাজ তার চোখজুড়ে কেনো এত বিষাদ? তরতাজা প্রাণচঞ্চল বসন্তকে এমন রঙ্গহীন নিরস করবার নেপথ্যে কারা?
বেরোবির দুর্যোগ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘যে সময়ে গরমকাল আসার কথা, তার আগেই চলে আসছে। ফলে গাছের ফুল আগেই ফুটছে এবং ঝরে যাচ্ছে। অকালে ফুল ফোটার ফলে প্রাণিজগতেও সেটার প্রভাব পড়ছে এবং অসংগতি তৈরি হচ্ছে।’
বসন্ত বাতাসে কারো বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ কারো বাড়ি আসুক আর না আসুক, কেটে গেলো আরও এক ফাল্গুন। পালাবদলের নিয়তিতে আসছে ফাগুনে কেউ দ্বিগুন হোক বা না হোক, আবারও ফুটবে বসন্তের ফুল, ফলবে চৈতালী ফসল। মৌ মৌ করবে আমের মুকুল, হয়তো হাতেগোনা কয়েকটি পাখিও ডাকবে। উপেক্ষার কাচের দেয়াল ভেদ করে রং ছড়াবে রক্ত পলাশ আর শিমুল। প্রকৃতির এত এত আয়োজনের পূর্ণতা তখনই, যখন মানুষে মানুষে হবে ভ্রাতৃত্ব, যৌথতা আর বৈষম্যহীন বেঁচে থাকার ইশতেহার।
দূষণ ও দখলের নিয়তি কিংবা জলবায়ুর প্রভাবে প্রকৃতির আচরণগত পরিবর্তনের পথগুলো বন্ধ করার কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।