জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ধুঁকছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। মোকবিলা করতে হচ্ছে অতিরিক্ত তাপমাত্রা, দাবানল, খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ঘটছে প্রাণহানিও। সহায় সম্বলহীন হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। যে তালিকা থেকে বাদ যায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। দিন দিন আরও নাজুক হচ্ছে আবহওয়া পরিস্থিতি। গত বছরের আবহাওয়া পর্যালোচনা করে এমন তথ্য তুলে ধরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস জলবায়ু পর্যবেক্ষণ পরিষেবা এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা-ডব্লিউ.এম.ও।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাইয়ে দক্ষিণ ইউরোপের ৪১% এলাকা চরম তাপপ্রবাহের আওতায় ছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে আরও তীব্র তাপের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইউরোপ। যেই তাপমাত্রা মানবদেহের সহ্য ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে। এতে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন বাইরে কাজ করা কর্মী, বয়স্ক মানুষ এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা।
২০২৩ সালে দশ দিন পর্যন্ত ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছিল স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রিসের কিছু অংশের মানুষ। যাকে রেকর্ড গরম শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এর জন্য গ্রিনহাউস গ্যাসকে দায়ী করছেন গবেষকরা। এমন পরিস্থিতির কারণে স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৩ সালে জলবায়ুজনিত কারণে কয়েক লাখ মানুষ চরমভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। এরমধ্যে ইউরোপ মহাদেশে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে। সেই পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ইউরো ছড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, ভবিষ্যতে এই পরিসংখ্যান বাড়বে, কমার কোনো লক্ষণ নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০ বছরে ইউরোপে তাপজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্লোভেনিয়া'র ১৫ লাখ মানুষ। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় দাবানলের শিকার হয়েছিল গ্রিস। যার আয়তন ৯৬০ বর্গ কিলোমিটার। যা এথেন্সের দ্বিগুণ। এমনকি ২০২২-২৩ সালে আয়তনের ১০ শতাংশ হারিয়েছে আলপাইন হিমবাহ।
এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশ সংস্থা তাদের আওতায় থাকা দেশগুলোর সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি খোলা আকাশের নিচে কাজ করা কর্মীদের চরম তাপ থেকে রক্ষায়ও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।