পরিবেশ ও জলবায়ু
0

বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার, বনে অবমুক্ত

নেত্রকোণার পাহাড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুরে একদিনের ব্যবধানে আরও একটি বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হয়েছে।

রোববার ( ৭ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলুয়াপাড়া গ্রাম থেকে বানরটিকে উদ্ধার করে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রাণীটিকে উদ্ধারের পর বনবিভাগের সহায়তায় গহীন বনের অবমুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবকরা। 

এর আগে শনিবার ( ৬ এপ্রিল) রাতে সোমেশ্বরী নদীর বালুচর থেকে বানরটিকে আটক করে স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক। পরে রাতে বানরটিকে তিনালি বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাদের আটকে স্বেচ্ছাসেবকদের খবর দেয়। 

এই দিকে গত শুক্রবার খাবারের সন্ধানে লোকাল এসে লোহার খাঁচায় বন্দী হয় বিলুপ্ত প্রজাতির আরও একটি লজ্জাবতী বানর। পরে খবর পেয়ে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের নন্দেরছটি গ্রাম থেকে লজ্জাবতী বানারটিকে উদ্ধার করে গহীন বনে অবমুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবকরা। 

লজ্জাবতী বানারটিকে উদ্ধার করে গহীন বনে অবমুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবকরা। 

স্থানীয়রা জানান, শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের তিনালি বাজারে স্থানীয় কয়েকজন বালু শ্রমিক বাঁশ, কাঠ ও লোহার তার দিয়ে তৈরি করা খাঁচার ভেতর অজানা একটি প্রাণীকে নিয়ে বাজারে আসে। অনেকেই প্রাণীর সামনে ভিড় করে দেখার চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন নামে ডাকে। এসময় স্থানীয় বাসিন্দা আমির খান প্রাণীটি লজ্জাবতী বানর বলে তাদেরকে জানাই এবং উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকদের খবর দেয়। পরে শ্রমিকরা প্রাণীটিকে বাজারে রেখেই পালিয়ে যায়। 

শ্রমিকদের তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়রা আরও জানান, নদীর বালুচরে ছোট এই প্রাণীটিকে দেখতে পেয়ে কয়েকজন মিলে প্রাণীটিকে ধরে খাঁচায় বন্দি করে। পরে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়ে তারা। 

সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক সুমন জানান, আমরা শনিবার রাতে জানতে পারি তিনালি গ্রামে একটি লজ্জাবতী বানর ধরা পড়েছে এবং স্থানীয় একজন বাসিন্দা প্রাণীটিকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে রেখেছে। পরবর্তীতে রোববার দুপুরে আমরা প্রাণীটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুরোপুরি সুস্থ থাকায় বিকেলেই স্থানীয় বন বিভাগের সহযোগিতায় বানরটিকে আবারও বনে অবমুক্ত করি। এর আগে আমরা গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিলুপ্ত প্রজাতির আরও একটি লজ্জাবতী বানর গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের নন্দেরছটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করি। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুইটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হলো। 

লজ্জাবতী বানারটিকে উদ্ধার করে গহীন বনে অবমুক্ত করে স্বেচ্ছাসেবকরা। 

তিনি আরও জানান, মূলত খাদ্যের সন্ধানেই এই প্রাণীগুলো বারবার লোকালয়ে আসছে। বর্তমানে বনভূমিতে যেভাবে প্রাকৃতিক গাছ ধ্বংস হচ্ছে এতে করে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল কমে আসছে। বিশেষ করে বছরে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত খাদ্যের সন্ধানে এই প্রাণীগুলো লোকালয়ে চলে আসে‌‌। এ সময় মানুষের নজরে আসলে প্রাণীগুলোকে আটকে তারা খাঁচা বন্দি করে। আমরা এখন পর্যন্ত মোট ৪৮ টি রেসকিউ অপারেশন সম্পন্ন করেছি। এরমধ্যে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা ১৪ টি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছি। 

উপজেলা বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেওয়ান আলী বলেন, 'গত একদিন আগেও আমাদের সহায়তা নিয়েই সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর স্বেচ্ছাসেবকরা বনে একটি লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত করে। এর একদিন যেতে না যেতেই আজকে আরও একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হয়েছে। আজকেও আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে গহীন বনে বানরটিকে অবমুক্ত করেছি। 

ইএ