শহরের ঝীলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোনালিসা বেগম নামের এক গৃহিণী আগে মাটির চুলায় রান্না করতেন। বর্তমানে তিনি উন্নত প্রযুক্তির সবুজ চুলায় রান্না করেন। মাটির চুলা পরিবর্তনের ফলে আগের চেয়ে তার অর্ধেক জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে। একই সাথে হাড়ি পাতিলে অতিরিক্ত কালি পড়া ও রান্নার সময় ধোঁয়া থেকে স্বস্তি পেয়েছেন। রান্নাও দ্রুত সময়ে শেষ হয়। তার মতো এই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির গৃহিণীরা এটি ব্যবহার করছেন।
গৃহিণীরা বলেন, 'আগুনের তাপ ছাড়া অনেক আরামে রান্না করতে পারি। এই চুলায় অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারি। স্বল্প কাঠের সবুজ চুলা পরিবেশ বান্ধব। এটাতে কোন ধোঁয়া নেই।'
শহরের সুলতানপুর এলাকার সিদ্দিকী'স কারখানায় পরিবেশবান্ধব সবুজ চুলা তৈরি হচ্ছে। কংক্রিট ও টিনের পাত দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মডেলের এই চুলা খুব সহজে যেকোন জায়গায় পরিবহন ও স্থাপন করা যায়। প্রতিটি চুলার দাম ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। বর্তমানে এই কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার চুলা তৈরি হচ্ছে।
এটি প্রায় ৫৫ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং তাপধারণ ক্ষমতা ২৮.৭৮ শতাংশ বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকী লিটন। বলেন, 'বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে আমরা এটা তৈরি করছি। যার জন্য চুলাটার দাম অনেক কম হচ্ছে। একটা চুলার খরচ পড়ে ৭০০ টাকার মতো। আমরা ১ হাজার টাকা বিক্রি করি। আমার অনেক এজেন্ট আছে যারা চুলাগুলো বিক্রি করে।'
পরিবেশবান্ধব সবুজ চুলায় রান্না চলছে
বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রকল্প ও ইউএনডিপি কর্তৃক পরিচালিত 'পার্বত্য নারীর জীবন রক্ষায় উন্নত চুলা উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শতাধিক চুলার মধ্যে এই চুলাটি সেরার স্বীকৃতি পায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ উপকূলীয় ও পাহাড়ি প্রত্যন্ত জনপদে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু বড় অর্ডারও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশের দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে আসা অনেকে এই চুলা নিয়ে যাচ্ছেন।
এক ব্যবসায়ী বলেন, 'গত মাসে ৪০০ পিস নিয়েছিলাম, উখিয়ায় চুলাগুলোর খুব চাহিদা রয়েছে।'
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের গবেষণার তথ্য বলছে উন্নত চুলা ব্যবহারে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় সম্ভব। একইসঙ্গে এটি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম কার্বন নিঃসরণ করে।
পরিবেশবান্ধব এই চুলার নতুন বাজার সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন। বলেন, 'বাণিজ্যিক প্রসারটা করার জন্য আমরা তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। সে যদি আর্থিক কোন সহযোগিতা চায় তাহলে আমি তা করবো। আমরা ইতোমধ্যে তার নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেছি।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, মাটির চুলা ব্যবহারে অতিরিক্ত ধোঁয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যার মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগে কষ্ট পায় প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। যার অধিকাংশই শিশু ও মা। তাছাড়া অবাধে জ্বালানি কাঠের ব্যবহারের ফলে বনায়নের ওপর প্রভাব পড়ছে।