'তিতাস' নদীকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত জনপদের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। দেশের অন্যতম বৃহৎ তিতাস গ্যাসক্ষেত্র, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা এবং নৌ ও স্থলবন্দর-এ জনপদের সমৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক।
কৃষি ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরী, পাদুকা শিল্প এবং আশুগঞ্জের চরলালপুর শুটকি পল্লী ও পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম টেনে ধরে আছে জেলার অর্থনীতির রথ।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য বাড়াতে নির্মিত হয়েছে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ।
আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটিও চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। এর মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ।
রিজার্ভ বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েক লাখ প্রবাসী। এ জেলার নারীদের অদম্য প্রচেষ্টার গল্প আশা জাগানীয়া। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়ন আরও বাড়াতে সরকারি সহযোগিতা চান নারীরা।
নারী ভোটাররা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী শিক্ষার দিক দিয়ে এখনো পিছিয়ে আছে। যে সরকারই আসুক তাদের এই দিকে মনযোগী হওয়া উচিত।
নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত এখন টিভিকে বলেন, ‘পুরুষের সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক দুরুহ। সরকারের অনেক সহযোগিতা প্রয়োজন নারী উদ্যাক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।'
প্রায় ২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংসদীয় আসন ৬টি। এবার জেলার ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৩ জন। বিগত নির্বাচনের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার। এর অধিকাংশই তরুণ এবং প্রবাসী কর্মী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। নতুন ভোটারদের কণ্ঠেও একই দাবি। নদীকেন্দ্রীক অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে নদ-নদী রক্ষা, হাইটেক পার্ক স্থাপনের প্রত্যাশা ভোটারদের।
ভোটাররা জানান, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অনেক উন্নত হয়ে গেছে। এই জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের পাশাপাশি জলাশয়ের উন্নয়ন করা খুব জরুরি।
সবক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন এবং অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত করতে হলে স্থানীয় শিল্পগুলোতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরামর্শ বিশিষ্টজনদের। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, গতি পাবে স্থানীয় অর্থনীতি।
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. আল মামুন বলেন, 'শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে এই অঞ্চলের বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।'
নির্বাচিত হলে নিজেদের সেরাটা দিতে চান প্রার্থীরা। ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে নানা পরিকল্পনার কথা জানান তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো.শাহজাহান আলম বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভিতরে শত শত ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা হবে। আমার লক্ষ্য থাকবে আশুগঞ্জ-সরাইলকে একটি বিশেষ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ আসনের আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে গ্যাস অন্বেষণের আরও সুযোগ আছে। যা এখন সঠিকভাবে হচ্ছেনা। গ্যাস পাওয়া গেলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা করা সম্ভব।'
গ্যাস ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার পরও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গড়ে উঠেনি বড় শিল্পকারখানা। বিসিক শিল্পনগরীটিও নানা সমস্যায় জর্জিত। তাই ভোটারদের প্রত্যাশা- অর্থনৈতিক কাঠামো আরও সুদৃঢ় করতে শিল্পায়নের প্রসার ঘটবে এ জেলায়- যাতে বাড়বে কর্মসংস্থান। মানুষের জীবনযাপনের সুষম মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন সাংসদরা।