রাবির চিকিৎসা কেন্দ্র ঘিরে নানা অনিয়মের অভিযোগ

রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র | ছবি: এখন টিভি
0

এবারের গল্পটা দেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের। ব্যঙ্গ করে শিক্ষার্থীরা যার নাম দিয়েছে নাপা সেন্টার। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ বছরের ইতিহাসে অনেক কিছু পাল্টালেও, বদলায়নি এই চিকিৎসা কেন্দ্রের জরাজীর্ণ দশা। পর্যাপ্ত সেবা তো নেই, উল্টো রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপেশাদার আচরণের অভিযোগ। কেবল এই বছরেই অবহেলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থী।

ঝলমলে সবুজের ফাঁকে উষ্ণ রোদের আঙিনা—দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ আর ৬টি ইনস্টিটিউটের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মানসিক প্রশান্তির দারুণ আয়োজন রয়েছে এখানে। ক্যাম্পাসের পাখ-পাখালি, কাঠবিড়ালী কিংবা গগণশিরিষের প্যারিস রোড মন ভালো করে দেয় নিমিষেই।

তবে ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য মনকে মোহিত করলেও আশঙ্কা দানা বাঁধে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা বা জরুরী প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার সক্ষমতা নিয়ে। ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নিজস্ব মেডিকেল সেন্টার থাকলেও, সেখানে নেই পর্যাপ্ত সেবা। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব আর লোকবল সংকটে জরুরি সেবা পেতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। মুমূর্ষু শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও, দুটিই পড়ে আছে অকেজো হয়ে। ফলে নামমাত্র এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি কোনো কাজেই আসছে না শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে সময় বেধে দেয়া আছে সাড়ে আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা যতটুকু চাইবে ততটুকু সেবা দিতে হবে তাদের।

আরও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে আবাসন সংকট কিংবা খাবারের মান নিয়ে কথা উঠলেও, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে খুব একটা সরব হতে দেখা যায়নি কাউকে। তবে সম্প্রতি সুইমিংপুলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সকলকে। এই ঘটনা আবারও সামনে এনেছে চিকিৎসার অভাবে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিলকে।

মৃত্যুর এই তালিকাটা নেহাত ছোট নয়। ২০২২ সালে ট্রাকচাপায় হিমেল, ২০২৩-এ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ফুয়াদ আল খতিব, কিংবা ২০২৪ সালে খেলার মাঠে প্রাণ হারান মেহেদী হাসান সিয়াম। সে সময়ও জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানেই থামেনি মৃত্যুর মিছিল। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৌমিতা, বিনোদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ইফতেখারুল এবং সবশেষ ২৬ অক্টোবর সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রাণ হারান সায়মা হোসেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘটনাতেই চিকিৎসার কালক্ষেপণ আর সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট।

সহপাঠীকে হারিয়ে মেডিকেল সেন্টারের সংস্কারের দাবিতে বহুবার আন্দোলন ও বিক্ষোভ হলেও মেলেনি কোনো সুরাহা। ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা এই কেন্দ্রের নাম দিয়েছেন 'নাপা সেন্টার'। এসবকিছুর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব আর চিকিৎসকদের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন তারা। আর নবনির্বাচিত রাকসু নেতারা বলছেন, তারা আবাসন, চিকিৎসা ও খাবারের মান নিয়ে কাজ করছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, জরুরি সময় দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।

রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা চাই হলপাড়াগুলোতে ফার্মেসি স্থাপন করতে। এটা এরইমধ্যে প্রথম অধিবেশনে আমাদের উত্থাপিত হয়েছে। তারপর বড় জায়গায় আমরা একটা সেন্ট্রাল একটা ফার্মেসি স্থাপন করতে চাচ্ছি।’

আর মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক বলছেন, সংকট সমাধানে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ওষুধের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারেও আশ্বাস দেন তিনি। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তারা। তবে শুধু কাগজের পরিকল্পনা নয়, শিক্ষার্থীরা চায় বাস্তবায়ন। যাতে আর কোনো সায়মা বা হিমেলকে চিকিৎসার অভাবে অকালে ঝরে যেতে না হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘ছয়জন ডাক্তার নিয়োগ করেছি জরুরি ভিত্তিতে এডহক সিস্টেমে সেখানে। সেটা হওয়ার পর চিকিৎসকদের ফুলটাইম রোস্টার আমরা ঠিক করতে পেরেছি অন্তত। কয়েকজন নার্স আর টেকনিশিয়ান নিয়োগ করতে পারলে মনে হয় মেডিকেল তার সম্পূর্ণ গতিতে কাজ করতে পারবে আশা করি।’

ইএ