সংস্কৃতি ও বিনোদন
শিক্ষা
0

নিজ ভাষার বই পেলেন গারো শিক্ষার্থীরা

৪ বছর পর আবারও নিজ ভাষার বই পেলেন গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারের এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মাঝেও সাড়াও ফেলেছে বেশ। তবে সংকট রয়েছে শিক্ষকের।

দেশে প্রায় ৫০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির বসবাস। এর মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হদিসহ আটটি সম্প্রদায় রয়েছে।

পাহাড়ি সীমান্তবর্তী নেত্রকোণার প্রায় সব কয়টি উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলায় এদের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলে বাঙালিদের সঙ্গে সমান তালে স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন তারাও। শিক্ষার ক্ষেত্রে বাঙালিদের পাশপাশি স্কুলেও যাচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তবে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চায় তারা কিছুটা পিছিয়ে।

ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর ভাষা টিকিয়ে রাখতে ২০১৯ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত চাকমা, মারমা, গারোসহ পাঁচটি সম্প্রদায়ের নিজ ভাষার বিশেষ বই বিতরণ করছে সরকার। এর মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে শুধুমাত্র গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা এই বই পাচ্ছে।

নিজ ভাষার বই পড়ছে গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা

শিশুরা জানায়, তারা বাংলা ভাষার পাশাপাশি গারো ভাষার বই পড়ছে। এই বইগুলোতে গারো ভাষার অনেক কিছু লেখা আছে।

গারো সম্প্রদায়ের নিজস্ব কোন বর্ণমালা না থাকায় এসব বই লেখা হয়েছে ইংরেজিতে। তবে বিশেষ এই বইয়ের শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে রয়েছে কিছুটা ধীরগতি। তাই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিশেষ এই বই সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি উচ্চ মাধ্যমিকে আমাদের এই বইটা দিতো তাহলে আমরা ভাষা চর্চা করতে পারতাম।'

শিক্ষকরা বলেন, 'সরকার এই ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার জন্য আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। এটা লিপিবদ্ধ হওয়ার ফলে এখন আনুষ্ঠানিকভবে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি।'

গারো সম্প্রদায় ছাড়াও এই অঞ্চলের নানা ইতিহাসের সাক্ষী হাজং সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পাঠ্যপুস্তকে তাদের ভাষার বই লিপিবদ্ধ করার।

বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন হাজং বলেন, হাজং ভাষার পাঠ্যক্রম প্রাক প্রাথমিকে যেন চালু করা হয়। তাতে হাজং ভাষা টিকে থাকবে।'

নিয়মিত বই বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা-ভাষীর বই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান। বলেন, 'ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখাই লক্ষ্য। তারা তাদের ভাষায় কথা বলবে ও মূল ভাষা শিখবে। পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রমগুলো চলমান আছে।'

এ বছর নেত্রকোণায় ১ হাজার ৩১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০২ সেট নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলায় ৯৪৪ জন গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ পিস বিশেষ বই।