অবশেষে দীর্ঘ প্রায় দেড়শ বছর পর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যুগের অবসান ঘটালো যুক্তরাজ্য। সোমবার দেশটির 'র্যাটক্লিফ অন সোরে' শেষ সচল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৬৭ সাল থেকে সচল ছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। যে কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেয়েছে ব্রিটেনের হাজার হাজার মানুষ। সোমবার, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের মধ্য দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা শেষ করলো যুক্তরাজ্য। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে 'জি সেভেন' ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যুগান্তকারী এই পদক্ষেপ নিলো দেশটি।
পৃথিবীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্ম হয়েছে যুক্তরাজ্যে, এখন প্রথম দেশ হিসেবে পুরোপুরি কয়লার ব্যবহার পরিহারও করছে তারাই। বিশ্বের প্রথম কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছিলো লন্ডনে ১৮৮২ সালে, এই হলবর্ন ভায়াডাক্ট পাওয়ার স্টেশন স্থাপন করেছিলেন থমাস এডিসন, যিনি দেশের অলিগলি আলোকিত করতে চেয়েছিলেন।
তখন থেকে বিশ শতকের অর্ধেক পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বসতবাড়ি আর ব্যবসায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো কয়লার মাধ্যমে। ১৯৯০ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হলেও দুই দশকই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল। ২০১২ সালেও বিদ্যুতের ৩৯ শতাংশ আসতো জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে।
২০১০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো ব্রিটেনে, ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে এসে তা পৌঁছেছে ৫০ শতাংশে। ব্রিটিশ সরকার বলছে, জ্বালানির যুগান্তকারী এই পালাবদলের মধ্য দিয়ে দ্রুতই ব্রিটেন পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
কয়লা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে দূষিত একটি মাধ্যম হলেও সুবিধা, এই খনিজ পদার্থ সবসময় পাওয়া যায়, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সূর্যের আলো কিংবা বাতাসের সরবরাহ নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। যে কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন কার্যক্রমও স্থিতিশীল হতে হবে বলে মনে করেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাজ্যের জ্বালানি গবেষণা সংস্থা ফারাডে ইনস্টিটিউট বলছে, এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে ব্যাটারি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আরও কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করে দেশটির বিভিন্ন জ্বালানি গবেষণা সংস্থা। তবে এক্ষেত্রে ব্যাটারি তৈরিতে চীন নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন আর দক্ষ লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন বলেও মত তাদের।
২০৫০ সালের মধ্যেই কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাজ্য। বিদ্যুৎখাতকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট 'জি সেভেন' সিদ্ধান্ত নেয়, দশকের মাঝামাঝি সময়ে কয়লার ব্যবহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসবে তারা। অথচ এখন পর্যন্ত জার্মানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ও জাপানের ৩০ শতাংশ কয়লার ওপর নির্ভরশীল।