পুঁজিবাজার
অর্থনীতি
0

সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আনতে তোড়জোর

গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান‌ পুঁজিবাজারে খুব একটা তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এবং দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে পুঁজিবাজারে জোড় দেয়া হলেও তা ১ শতাংশের কম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে শেয়ারবাজারে যে আস্থা সংকট চলছে তা কিছুটা দূর করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়নের কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া বাজারের আস্থা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু। এখন পর্যন্ত এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা । যার পুরো অর্থ ঋণের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ ঋণের অর্থায়নে করা আরেক মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল। যার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত লাইন তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব ছোট ও বড় প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর কাজে ব্যয় হতে পারে চার লাখ কোটি টাকার বেশি।

এসব প্রকল্পের খরচ মেটানো হচ্ছে দেশি-বিদেশি ঋণ এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে। অথচ দেশে পুঁজিবাজার থাকলেও ঋণের চাপ কমাতে প্রকল্পগুলোর বিপরীতে করা হয়নি কোনো বন্ড বা শেয়ার ইস্যু। এতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে ১ শতাংশেরও কম ব্যবহার করা হচ্ছে শেয়ারবাজারকে।

ব্যবসা ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধে সরকারি-বেসরকারি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বাজার থেকে‌ দুর্বল কোম্পানি টাকা তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটের কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, 'দুর্বল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসছে বহুদিন ধরে। এর ফলে মার্কেটের কোয়ালিটি অনেক ডাউন হয়েছে। আর এতে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা লোকসানের মুখে পড়ছে।'

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবশেষ তথ্যমতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪০০টিরও বেশি কোম্পানি। যার বাজার মূলধন ৭ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বড় অংশ সরকারি ট্রেজারি বন্ড এবং বহুজাতিক কোম্পানির।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির তথ্য। ছবি: এখন টিভি

ডিএসইর তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে মাত্র ১২টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের বাজার মূলধন মোট ১২ শতাংশের বেশি। এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২০টি। এগুলোর বাজার মূলধন মোট ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সবশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও আর কোনো কাজে আসেনি।

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজার মূলধন। ছবি: এখন টিভি

জানা গেছে, গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের সব লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির চেষ্টা করা হয়েছে। আর গত কয়েক বছরে ব্যাংকে চাপ কমাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে পুঁজিবাজারে জোর দিলেও কোনো কাজে আসেনি। সেক্ষেত্রে ফের নেয়া একই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজার মূলধন। ছবি: এখন টিভি

পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম হবে বলে মনে করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। তাই এই খাত থেকে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহ দেখা যায়নি।

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, 'একটা প্রকল্পের সাথে তুলনা করলে পরিমাণটা খুবই নগন্য। আর আমরা এখনো এমআরটি লাইন-৬ পুরোপুরি শেষ করতে পারি নাই এবং বুঝে নেই নাই। এখানে অনেক বড় ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন কিন্তু আমি জানি না আমাদের বাজারে যে বন্ড রয়েছে সেখান থেকে কতটুকু সার্পোট পাবো।'

প্রাথমিকভাবে টেলিকমিউনিকেশন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও গ্যাস এবং যোগাযোগসহ বেশকিছু খাতের সরকারি ১৫থেকে ১৬টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জ। তাই এতদিন পরে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ নির্দেশনা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।

তালিকাভুক্তিতে সম্ভাব্য সরকারি কোম্পানি। ছবি: এখন টিভি

তিনি বলেন, '১৫ থেকে ১৬ টা কোম্পানি দেখছি যেখানে বিদ্যুৎ, ডাক বিভাগ, টেলি যোগাযোগ বিভাগ এমন ধরনের অনেকগুলো রয়েছে।' 

অপরদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তিতে আগের সমস্যা ও সমাধানের কথা জানালেন ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, 'বহু বছর ধরে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। ২০ বছর আগ থেকে। সরকার হয়তো চিহ্নিত করছে। যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে এইসব রয়েছে তাদের কোনো পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই।'

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারে আস্থা সংকট কিছুটা কমে গতি আসবে বলে জানান বিশ্লেষকরা। পুরোপুরি আস্থা ফিরে পেতে সব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তারা। ি

ইএ