কক্সবাজার বিমানবন্দর: স্বীকৃতিতে আন্তর্জাতিক হলেও ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি কতটা!

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ চলমান
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ চলমান | ছবি: এখন টিভি
0

দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও শিগগিরই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ডানা মেলবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এরই মধ্যে মিলেছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি। এর মধ্য দিয়ে পর্যটনের পাশাপাশি অর্থনীতি, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সংযোগেও উন্মোচন হতে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত। তবে টার্মিনাল ভবনের নিচতলার অ্যারাইভাল অংশ পুরো প্রস্তুত হলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বাস্তব প্রস্তুতি কতটা তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যুক্ত হলো কক্সবাজার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই চলছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নিচতলার অ্যারাইভাল অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত। এছাড়া ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, ব্যাংকের কালেকশন বুথ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বুথসহ প্রবাসী কল্যাণ ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের কাজও শেষ। পাশাপাশি প্রস্তুত করা হয়েছে আধুনিক লাগেজ স্ক্যানার মেশিন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বা ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে যুক্ত হবে প্রয়োজনীয় জনবল।

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্টোগ্রাফার মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রবাস কল্যাণ ডেস্ক, হেলথ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন ডেস্ক মোটামুটি চালু হয়ে গেছে। বাকি এখন প্রশাসন থেকে ফ্লাইট এপ্রুভ হলে নামতে পারবে। মোটামুটি এটা অ্যারাইভালের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।’

খুব শিগগিরই এই রানওয়ে থেকে আকাশে উড়বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যা বদলে দেবে এই শহরের আকাশপথের ইতিহাস। কক্সবাজার তখন শুধু অবকাশ-যাপন নয়, হবে আন্তর্জাতিক সংযোগের নতুন কেন্দ্র।

প্রথম পর্যায়ে কক্সবাজার–ঢাকা–কলকাতা–কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। পরবর্তীতে যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ধাপে ধাপে বাড়তে পারে ফ্লাইট সংখ্যা।

কার্টোগ্রাফার মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘রানওয়ের মোটামুটি কাজ ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রজেক্টের সময় আছে এর মধ্যেই হয়তো বাকিটুক শেষ হয়ে যাবে।’

ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। বর্তমান ৯ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ে সাগরের বুকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের কাজও শেষ প্রায় ৮৪ শতাংশ। শিগগিরই এটি হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, প্রকৃত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে বিমানবন্দর ও শহরকে সাজাতে হবে বিদেশি পর্যটকদের উপযোগী করে।

ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বাংলাদেশের সামুদ্রিক মাছ বিভিন্ন দেশে যায়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে আমরা সরাসরি কক্সবাজার থেকেই এগুলো বাইরের দেশে পাঠাতে পারবো।’

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে শুধু অবকাঠামো নয়, এটার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কানেক্টিভিটিও সম্পৃক্ত। এখানে যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের জন্য ওয়েলকামিং পরিবেশ তৈরি করা, এগুলো না করে চালু করলে আমরা মনে হয় প্রথম দর্শনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’

বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, চলমান ৩ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রানওয়ে সম্প্রসারণে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি আর টার্মিনাল ভবন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২৭৭ কোটি টাকা।

ইএ