পরিষেবা
অর্থনীতি
0

প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে উদগিরণ হওয়া গ্যাস প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কারখানায়। চাপ নিয়ন্ত্রণ না করে এসব গ্যাস ব্যবহারের ফলে বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি। স্থানীয়রা বলছে, বছরের পর বছর এভাবেই গ্যাস সংযোগ দিয়ে আসছে প্রভাবশালী চক্র। তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যদিও গ্যাসের এই উদগিরণ বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্যাস ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।

প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি

ছবিতে তিতাস নদীর এই কর্মযজ্ঞ দেখে সামনাসামনি মনে হতে পারে নদী থেকে ড্রাম ও পাইপের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে পানি। তবে কাছে গেলেই দেখা যাবে, নদী থেকে উদগিরণ হওয়া গ্যাস ড্রামে সংরক্ষণ করে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে বাসাবাড়ি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে।

সদর উপজেলার বাকাইল গ্রামের বাসিন্দারা এভাবেই প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করছেন প্রায় দেড় দশক ধরে। গ্রামের পার্শ্ববর্তী তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত উদগিরণ হচ্ছে গ্যাস। আর এই গ্যাস স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে পৌঁছে দিচ্ছে গ্রাহকদের কাছে। বাড়ির পাশে গাছের উপর ঝুলিয়ে গ্যাসের পাইপ নেয়া হয়েছে বাসাবাড়িতে। সংযোগ দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি চুন ও চুড়ি তৈরির কারখানাতেও।

নদীতে ড্রাম ও পাইপ বসানোর কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে নৌযান চলাচল। ঝুঁকি আছে জেনেও প্লাস্টিকের পাইপে সরবরাহ করা গ্যাস ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় একজন বলেন, 'তার দিয়ে হোক বা যেকোনোভাবে সিস্টেম করে আমরা চুলার মধ্যে নেই। একদিন রান্না করলে ছয় দিন করতে পারি না।'

একজন নৌকার মাঝি বলেন, 'রাতে আমরা যখন নৌকা দিয়ে যাই, এই পাইপগুলো নৌকার মধ্যে ধাক্কা খায়। পাইপ বিছিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করে ফেলেছে।'

মূলত তিতাস গ্যাস ফিল্ডের তিন নম্বর কূপ খননের সময় লিকেজ হয়ে গ্যাস মাটির উপরের স্তরে চলে আসে। ফলে মাটির ফাঁক-ফোকর দিয়ে নলকূপ, নদীর পাড়, জমির আইল এবং বাড়ির আঙিনা দিয়ে গ্যাস উদগিরণ হতে থাকে। উদগিরণ বন্ধে ব্যর্থ হয়ে ২০০৭ সালে কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়াতেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চলছে। যার ফলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক মো. শামীম আহমেদ বলেন, 'এখানে কিন্তু বিশাল একটা বাণিজ্য হয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা আছে তারা এটা ভোগ করছে। বাংলাদেশ সরকারের এই গ্যাসের দায়িত্বে যারা আছেন তারা যেন এর প্রতিকার করে।'

কোনো প্রকার চাপ নিয়ন্ত্রণ না করেই প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের কর্মকর্তারা। দ্রুত এটি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ তাদের।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, 'বাখরাবাদের উদ্যোগে এখানে অভিযান চালানোর সুযোগ খুবই সীমিত। জেলা প্রশাসন জনগণের স্বার্থে এখানে একটা উদ্যোগ নিতে পারে। আর দ্বিতীয়ত যেহেতু গ্যাসফিল্ডের কোনো গ্যাস কূপ থেকেই এই গ্যাস আসছে তাদের এটা মনিটরিং করতে হবে।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা বলেন, 'এই অবৈধ কাজ যে প্রভাবশালী লোকই করুক না কেন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবো। হয়তো খুব শিগগিরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। এই ধরনের কাজ যারা করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ২৪টি কূপ থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর