সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, আয় বন্ধ থাকায় দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা হিসেবে গেল ২২ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। পানি সরে গেলেই তুলে নেয়া হবে সেতু ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা।
রাঙামাটিতে ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। বছরে ৫ লাখের বেশি দেশি- বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন। এতে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং ও ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে বছরে আয় আসে অন্তত আড়াই কোটি টাকা।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে দুই পাহাড়ের মাঝখানে তৈরি করা হয় এই আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি। তাই পর্যটকেরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়।
কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।পাবনা থেকে পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে সেতুটি দেখতে এসেছেন সফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম, কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল সেতুতে ছবি তুলবে। সেটা আর হল না। এখন সবারই মন খারাপ’।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে সস্ত্রীক আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে সুযোগ খুঁজছিলাম রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে। কিন্তু এখন এসেই ডুবন্ত সেতু দেখে খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না’।
ঝুলন্ত সেতু টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেটি সাত থেকে ১০/১২ হাজার পর্যন্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় আমার বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি। পর্যটকরা টিকিটি ছাড়াই সেতু এলাকা ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্হাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘তিনফুট পানির নিচে ডুবে আছে সেতুর পাটাতন। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রিও বন্ধ রাখা হয়েছে।এতে দৈনিক রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকার বেশি। পানি কমলেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।
হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফিট মিনস সি লেভেল। কিন্তু বৃষ্টি হলেই পর্যটন সেতুসহ শহর এলাকায় হ্রদ তীর বর্তি বসতঘর ডুবে যায়। মূলত হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
তবে পানির স্তর বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট কয়েক দফা খুলে দিয়ে পানি বের করে দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও উজান থেকে পানি নামতে থাকায় হ্রদের পানির উচ্চতা ধীর গতিতে কমছে বলে জানা গেছে।