পরিষেবা
অর্থনীতি
0

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত উত্তরাঞ্চল, বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধে শত কোটি টাকার ক্ষতি

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে আছে উত্তরাঞ্চল। বেশ ক'টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে না পারায় তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। এর মধ্যে গতকাল (সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কবে নাগাদ অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলতে পারছে না কেউ। এতে জনজীবনে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে শত কোটি টাকা।

কয়েকদিন ধরেই রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আছে জনজীবন। এর সাথে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। ভাদ্রের তীব্র গরমে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত একই অবস্থা। শহরগুলোতে গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা থাকছে লোডশেডিং। গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

জনজীবনের পাশাপাশি প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প ও কলকারখানার উৎপাদন। ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপসহ হালকা প্রকৌশলের কারখানায় উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না। উত্তরের শহর সৈয়দপুরে হালকা প্রকৌশলের প্রায় ৪৫০ কারখানার চিত্র অনেকটাই অভিন্ন।

ব্যবসায়ীরা জানান, সব মিলিয়ে শুধু সৈয়দপুরেই প্রতিদিন ক্ষতি অর্ধশত কোটি টাকা।

কারখানায় কাজ করা একজন শ্রমিক বলেন, 'সারাদিনে তিন থেকে সাড়ে দিন ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে। আমরা খুবই চাপে আছি। আধা ঘণ্টার কাজ আমাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।'

সৈয়দপুর বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুদ্দীন দুলাল বলেন, 'আমাদের ডিউটি টাইম হলো সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে লাঞ্চ টাইম হলো দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানে প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ টাকা করে যাচ্ছে। আমাদের সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কোটি টাকার মতো ক্ষতি হচ্ছে।'

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। এর ফলে চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বড়পুকুরিয়া। সোমবার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে গেলে পুরো অচল হয়ে পড়ে এই কেন্দ্রটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রের তিন ইউনিটের মধ্যে দুই নম্বর ইউনিটটি এই বছরে শুরু থেকেই নষ্ট। এটার সক্ষমতা ছিল ১২৫ মেগাওয়াট। এক নম্বরটি ওভারহেলিংয়ের জন্য সাময়িক বন্ধ আছে। ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিন নম্বর ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটি কাটিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) চালু করা হয়। তবে দুই দিনের মাথায় আবারও ত্রুটি দেখা দিলে সোমবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা। চীনা প্রতিষ্ঠান যন্ত্রাংশ সরবরাহ না করা পর্যন্ত এই ত্রুটি মেরামত সম্ভব হবে না।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'এক নম্বরটা আমরা মেইনটেনেন্সের জন্য বন্ধ আছে। দুই থেকে এক দিনের মধ্যেই আমরা ওইটা চালু করে দেবো। দুই নম্বরটা তো আগে থেকেই বন্ধ। যার সাথে আমাদের কন্ট্রাক্ট ছিল তারা মালামাল ঠিকমতো দেয়নি। তারা যদি দিতো তাহলে তো আর বন্ধ হতো না।'

তবে এক নম্বর ইউনিট ওভারহেলিং শেষে দু'একদিনের মধ্যে চালুর আশা কর্তৃপক্ষের। এই ইউনিট চালু হলেও লোডশেডিং খুব বেশি কমবে না বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। ২০০৬ সালে চীনের সহযোগিতায় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর